অধিকার ও যোগ্যতা
সুলতান প্রথম বায়েজিদ (১৩৬০-১৪০৪)।
সুলতান প্রথম মুরাদের সুযোগ্য সন্তান।
তাঁকে উপাধি দেওয়া হয়েছিল 'ইয়ালদারম' অর্থাৎ বজ্রাঘাতকারী,অসাধারণ সাহসিকতা, বীরত্ব আর ইসলামের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হওয়ার কারণে উসমানিরা তাঁকে এই উপাধি দিয়েছিল।
ইউরোপের রাজা-প্রজাদের জন্য তিনি ছিলেন যমদূত।
১৩৯১ খ্রিষ্টাব্দে বাইজেন্টাইন সম্রাট ইমানুয়েলের শাসনামলে কনস্টান্টিনোপল ঘেরাও করে গোটা খ্রিষ্টজগতকে ভড়কে দিয়েছিলেন, তাই ১৩৯৩ খ্রিষ্টাব্দে ইমানুয়েলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ভেনিসে সমবেত হয়।
তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, গোটা ইউরোপে এই সংবাদ পাঠাতে হবে— 'ইউরোপের সব সম্রাট যেন উসমানিদের বিরুদ্ধে শক্তি ও সৈন্য জোগাড় করে এবং ইউরোপ থেকে উসমানিদের বিতাড়িত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।'
অপরদিকে হাঙ্গেরির শাসক সিগিসমুন্ড বুলগেরিয়ার সম্রাট শিশম্যানের সঙ্গে উসমানিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এক গোপন চুক্তি করে বসে।
এ চুক্তির বিষয় ছিল—উসমানি সুলতান প্রথম মুরাদ ইউরোপের যে ভূখণ্ড জয় করেছিলেন, তা ফিরিয়ে আনা।
সুলতান প্রথম বায়েজিদ এ চুক্তির খবর শুনেই বুলগেরিয়ার দিকে একটি শক্তিশালী সেনাবহর পাঠান। সেনাবহরটি বুলগেরিয়ার রাজধানী টারনোভো পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হয়।
তারা টারনোভা অবরোধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনে। শুধু তা-ই নয়; সামনে বেড়ে দানিয়ুব নদীর আশেপাশের সালস্ট্রা, নিগবুলু, ভিদান প্রভৃতি অঞ্চলগুলোও বিজয় করে নেয়।
সম্রাট শিশম্যানকে বন্দি করে আদ্রিয়ানোপল নিয়ে আসা হয়। তখনকার আদ্রিয়ানোপল ছিল উসমানি সালতানাতের রাজধানী।
এভাবেই পুরো বুলগেরিয়া উসমানি সালতানাতের অধীনে চলে এসেছিল।
সুলতান প্রথম বায়েজিদের দ্রুত এ বিজয়োন্নতি দেখে হাঙ্গেরির সম্রাট সিগিসমুন্ড ভড়কে যায়। সে অনুভব করতে পারে, এবার হয়তো তার পালা! তারপরও সে আপন শৌর্য-বীর্য ও প্রতাপ জাহির করতে চায়।
নিজেকে সে নির্ভীক প্রমাণিত করতে চায়, এ উদ্দেশ্যে সে সুলতান প্রথম বায়েজিদর কাছে প্রতিনিধিদল পাঠায়। প্রতিনিধিদল সম্রাটের পক্ষ থেকে একটিমাত্র কথা বলার ব্যাপারে আদিষ্ট ছিল; আর তা হলো—
'কোন অধিকার আর যোগ্যতাবলে আপনারা বুলগেরিয়ায় হামলা করার সাহস করলেন?'
সুলতান প্রতিনিধিদলের কথা শোনার পর শুধু একটু মুচকি হেসে বলেন, "ভালো।
এখনই আমি তোমাদের দেখিয়ে দিচ্ছি, কোন অধিকার আর যোগ্যতাবলে আমি বুলগেরিয়ায় হামলা করার সাহস করেছি!'
এ বলে তিনি প্রহরীর কানে ফিসফিসিয়ে পবিত্র কুরআন নিয়ে আসার আদেশ দেন।
প্রহরী কুরআন নিয়ে আসার পর তিনি প্রথমে কুরআনে চুমু খান, তারপর কুরআনকে ডানহাত দিয়ে ধরেন আর বামহাতে নেন তরবারি, এরপর ডানহাত দিয়ে কুরআন উঁচিয়ে ধরে প্রতিনিধিদলকে সম্বোধন করে বলেন,
'এটার অধিকারে হে প্রতিনিধিরা!
এই কুরআনের অধিকারে।'
এরপর তাঁর বাম হাত দিয়ে তরবারি উত্তোলন করে বললেন,
'এটার যোগ্যতায়'
হে প্রতিনিধিরা! এই তরবারির যোগ্যতার বলে!'
সুলতানের জবাব শুনে প্রতিনিধিরা তাঁর দরবার থেকে মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়।*
সিরিজ- ওসমানী খেলাফতের স্বর্ণ কণিকা ।
©ofde islam
Thanks everyday