কাবার ইমাম শায়েখ শুরাইমের পদত্যাগ।
এবার কাবার ইমামপদ থেকে পদত্যাগ করলেন শায়েখ শুরাইম,
৩২ বছর যাবত তিনি কাবার ইমাম ছিলেন এবং ছিলেন হাইকোর্টের বিচারক ও বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি উম্মুল ক্বুরার
(أم القرى) সিনিয়র প্রফেসর ،
হঠাৎ করেই তিনি সমস্ত দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন,
এ ঘটনা গোটা মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলেও সৌদি সরকারের অধীনস্থ হারামাইনের সাইটে শুধু এতোটুকুই বলা হয়েছে যে শায়েখ শুরাইম ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন।
কিন্তু তিনি কেন এমন দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করবেন যে দায়িত্বকে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব বলা হয়!
এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কোটি মুসলিমের মনে ,
যে শায়েখ শুরাইমের তেলাওয়াতে গত ৩২ বছর যাবৎ শীতল হয়ে আসছিল পবিত্র কাবার চত্বর তিনি কি নিজেই পদত্যাগ করেছেন নাকি উনাকে পদত্যাগ করানো হয়েছে!!
এ বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করতে হলে প্রথমে সৌদি আরবের বর্তমান অবস্থার উপর দৃষ্টি ফেলতে হবে,
সৌদির বর্তমান সরকার এমডি বিন সালমান ক্ষমতায় আসার পর থেকে আধুনিকতার নামে যেভাবে অশ্লীলতার বাঁধ ভেঙেছে সৌদি আরবে তা তো কারোর অজানা নয়,
সৌদির কোন আলেম এই অশ্লীলতার বিরুদ্ধে মুখ খুললেই যেতে হয়েছে তাকে জেলে, সামান্য থেকে সামান্য টুইট বার্তার কারণেই বন্দি করা হয়েছে শত শত আলেমকে
এখন তা আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে,
গ্রেফতারকৃতদের মধ্য হতে কাবা শরীফের ইমাম সালেহ আত তারিক থেকে শুরু করে হাইকোর্টের বিচারক ভার্সিটির অধ্যাপক সহ রয়েছেন অসংখ্য আলেম , এবং ইসলামিক স্কলার,
![]() |
কারাবন্দি কয়েকজন আলেম ও ইসলামিক স্কলার |
![]() |
শায়েখ আওয়াত আল ক্বারনী |
![]() |
শায়েখ সালেহ আহমাদ শামী |
এদিকে কাবা শরীফের আরেক ইমাম শায়েখ খালেদ আদ-দামেদীকে শুধু যে ইমামের পদ থেকে পদত্যাগ করানো হয়েছে তা নয় বরং সমস্ত প্রকার ইসলামিক কার্যকলাপ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে নজরবন্দিতে রাখা হয়েছে,
এগুলোর কারণ তারা বিভিন্ন সময় সৌদি সরকারের অন্যায় কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন বা টুইট করেছেন।
এ সময় যার পদত্যাগ নিয়ে মুসলিম বিশ্বে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে তিনিও 2018 সালে সিরিয়ার মজলুম মুসলিমদের বিষয়ে একটি টুইট করেছিলেন, ফলে সৌদি সরকার তার ঐ পোস্টটি ডিলিটেই করেনি শুধু বরং তার ভেরিফাইকৃত টুইটার একাউন্টটি unpublish পর্যন্ত করে দেয়।
সৌদি সরকারের অপকর্মের তালিকা দেশ দীর্ঘ হলেও এর সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বিষয়টি বেশ পরিষ্কার কেন শায়েখ শুরাইম এই পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন , সহজ ভাবে বললে উনি নিজেকে সরিয়ে নেননি বরং সরে যেতে ওনাকে বাধ্য করা হয়েছে, কারণ তিনি সৌদি রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে ছিলেন তাদের ইসলামবিরোধী অপকর্মের উপর তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন,
সৌদি রাজ পরিবার বুঝতে পেরেছে শায়েখ শুরাইমকে বাগে আনা সম্ভব হবে না ।
তবে যেহেতু শায়েখ শুরাইম তিন দশকের বেশি সময় ধরে কাবার ইমামপদে নিয়োগ ছিলেন
এবং উনার মনোমুগ্ধকর তেলাওয়াতের কারণে মুসলিম বিশ্বে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন
তাই সৌদি সরকার নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে সরাসরি বহিস্কার বা গ্রেফতারের পথে না গিয়ে তাকে নিজ থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ।
এক্ষেত্রে অনেকটা বিপরীত দিকে অবস্থান নিয়েছেন আরেক প্রবীণ ইমাম আব্দুর রহমান সুদাইস
যিনি হারামাইন তথা কাবা ও মসজিদুল নববীর প্রধান পরিচালকের পদে নিয়োগ রয়েছেন ,
শায়খ শুরাইম যেখানে ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে হারামাইন থেকে বিদায় নিয়েছেন সেখানে আব্দুর রহমান সুদাইস অনেকটাই খুল্লাম খুল্লা সৌদি রাজপরিবারের তুষামোদ করে চলেছেন।
২০১৭ সালে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ড্রোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি সফরের সময় তিনি বলেছিলেন
বাদশাহ সালমান এবং ড্রোনাল্ড ট্রাম্প পৃথিবীকে শান্তির পথে পরিচালনা করছেন,
ঐ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠলেও আব্দুর রহমান সুদাইস বহাল তবিয়তে রয়েছেন, তদুপরি তার প্রশাসনিক ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন এ জাতীয় ঘটনাগুলোর মাধ্যমে সৌদি সরকারের পক্ষ হতে একটা পরিষ্কার সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে যে
সৌদি আলেমদের নিজ পদে বহাল থাকতে হলে সরকারের সকল কর্মকান্ড সমর্থন করে যেতে হবে
অন্যথায়ই পরিণতি হবে শায়েখ শুরাইমের মতো জোরপূর্বক পদত্যাগ ,
শায়েখ সালেহ আত-তালেবের মত কারাদণ্ড, কিংবা শায়েখ আওয়াত আল-কারনীর মত মৃত্যুদণ্ড।
যে দেশে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুয়ে আছেন
যে দেশে পবিত্র কাবা শরীফ ও মাসজিদুন নববী অবস্থিত সেই দেশের এমন পরিণতি কেউ হয়তো কল্পনাও করেনি
হা , যা অন্যদের কল্পনাও আসেনি তাই বাস্তবায়িত করছে রাজপুত্র বিন সালমান।
Thanks everyday