উলু জামে মসজিদের মধ্যখানে অজুর হাউজ: উসমানিদের ন্যায়পরায়ণতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত ! Ulu jami mosque. Ofde islam

0
 

উলু জামে মসজিদের মধ্যখানে অজুর হাউজ: উসমানিদের ন্যায়পরায়ণতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত !

বুরসা, তুরস্কের চতুর্থ বৃহত্তম শহর। ইসতাম্বুল ও আঙ্কারার মাঝামাঝি অবস্থিত, উসমানি খিলাফতের প্রাচীন রাজধানী। বুরসা শহরের সবচেয়ে বড় মসজিদ হচ্ছে ‘উলু জামে মসজিদ' "ulu jami mosque".
সুলতান প্রথম বায়েজিদ তাঁর শাসনকালে ১৩৯৬-১৪০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বুরসার প্রসিদ্ধ 'উলুদাগ' পাহাড়ের নামে সেলজুক নির্মাণশিল্পের আদলে মসজিদটি নির্মাণ করান। তৎকালীন প্রসিদ্ধ স্থাপত্যবিদ আলি নিসার মসজিদটি নির্মাণ করেন। উসমানি সালতানাতের প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন এই মসজিদে ২০টি গম্বুজ ও দুটি মিনার রয়েছে।
ঐতিহাসিকগণ বলে থাকেন, সুলতান প্রথম বায়েজিদ অঙ্গীকার করেছিলেন, তিনি যদি নিকোপলিস যুদ্ধে জয়লাভ করেন, তাহলে ২০টি মসজিদ নির্মাণ করবেন। পরে তিনি নিকোপলিস যুদ্ধে জয়লাভ করলেও ২০টি মসজিদ নির্মাণ করতে সক্ষম হননি, তাই তখনকার আলিমদের কাছে তাঁর কৃত অঙ্গীকার পূরণের ব্যাপারে সমাধান চেয়েছিলেন। আলিমগণ এই সমাধান দিয়েছিলেন যে, তিনি যদি একটি মসজিদ নির্মাণ করে সেই মসজিদে ২০টি গম্বুজ স্থাপন করেন, তাহলে তাঁর কৃত অঙ্গীকার পূরণ হয়ে যাবে। সে হিসেবেই সুলতান তাঁর নির্মিত ‘উলু জামে মসজিদে ২০টি গম্বুজ স্থাপন করেছিলেন।
তবে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, এ মসজিদের ঠিক মধ্যখানে রয়েছে অজুর হাউজ! 
মুসল্লিরা এ হাউজ থেকে অজু করে। কিন্তু অজুর হাউজটি মসজিদের ঠিক মাঝামাঝি কেন, তা জানতে হলে আরেকটি কাহিনি জানতে হবে।

Ulu jami mosque busra

মসজিদটি যে স্থানে আছে, সেই স্থানে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ছিল। উসমানি প্রশাসন ঘরবাড়িগুলো ভেঙে মসজিদ নির্মাণের জন্য বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্য দিয়ে জায়গা খরিদ করে নেয়। কিন্তু বেঁকে বসে একজন খ্রিষ্টান মালিক, সে তার ঘর বিক্রি করতে নারাজ, সবাই বিক্রি করলেও সে করবে না। বিশেষ করে সে যখন জানতে পারে, মসজিদের ভিত্তি তারই ভিটেমাটিতে প্রতিষ্ঠিত হবে। তার ভিটেমাটিতে মুসলমানরা মসজিদ বানিয়ে সিজদা করবে, এটা সে মেনে নিতে পারছিল না। তার অস্বীকৃতি বিষয়টিকে কঠিন করে তোলে। কারণ, এই একটিমাত্রা ঘরের কারণে মসজিদ নির্মাণ করা যাচ্ছে না।
খিলাফতের লোকেরা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি অবহিত করে। উসমানি প্রশাসন বিষয়টির শরয়ি সমাধানের জন্য শায়খুল ইসলামের কাছে ফাতওয়া তলব করে। শায়খুল ইসলাম এ মর্মে ফাতওয়া দেন যে, যেকোনো মূল্যে ঘরের মালিককে রাজি করিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় এখানে মসজিদ বানানোর চিন্তা বাদ দিতে হবে। কারণ, পরিকল্পিত জায়গায় ওই ঘরওয়ালার মালিকানা রয়েছে। তার মালিকানাধীন বস্তুর ব্যবহারে সে সম্পূর্ণ স্বাধীন। তার ওপর কোনো বলপ্রয়োগ করা যাবে না। ইসলাম এর অনুমতি দেয় না। বেশি থেকে বেশি তাকে মিনতি করে বোঝানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।


খিলাফতের লোকজন আবারও তাকে বোঝায়, কিন্তু যেই-সেই। সে তার ঘরের জায়গা বিক্রি করবে না! কী আর করা। শেষ চেষ্টা হিসেবে লোকজন তাকে দ্বিগুণ মূল্য প্রদানের লোভ দেখাল। দ্বিগুণ মূল্যের কথা শুনে সে রাজি হয়ে যায়। তবে একটি শর্তারোপ করে, তার ভিটের উপর মসজিদের ভিত্তি রাখা যাবে না। আশপাশে রাখতে হবে। মসজিদের বাইরের অংশে তার ভিটেমাটি থাকতে হবে। লোকজন প্রশাসনকে খ্রিষ্টান লোকটির শর্ত সম্পর্কে অবহিত করে। প্রশাসন আবারও শায়খুল ইসলামের কাছে ফাতওয়া তলব করে। শায়খুল ইসলাম ফাতওয়া দেন—'খ্রিষ্টানের শর্ত গ্রহণযোগ্য। মসজিদ নির্মাণের সময় এ শর্ত বিবেচনাযোগ্য"। খ্রিষ্টান ব্যক্তির শর্ত মেনে নেওয়া হয়। উসমানি প্রকৌশলীরা মসজিদের ম্যাপও এঁকে ফেলেন। কিন্তু দেখা যায়, ওই খ্রিষ্টান ব্যক্তির জমিও মসজিদের ভিত্তির আওতায় চলে এসেছে! এখন কী করা?
প্রকৌশলীরা বুদ্ধি করে খ্রিষ্টান লোকটির ঘরের জায়গায় মসজিদের অজুর হাউজ বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা ম্যাপের মধ্যে অজুর হাউজের চিত্র অঙ্কন করে নেন। অজুর হাউজটি পড়ে যায় মসজিদের ঠিক মধ্যখানে।

                  
ম্যাপ অনুসারেই মসজিদ নির্মিত হয়ে যায়। খ্রিষ্টান মালিকের শর্তানুযায়ী তার ভিটেমাটিকে সিজদার আওতা থেকে বাইরে রাখা হয়। সেখানে তৈরি হয় অজুর হাউজ। 
আজও অজুর এই হাউজটি উলু জামে মসজিদের ঠিক মধ্যখানে উসমানিদের ন্যায়পরায়ণতার সাক্ষী হয়ে আছে।”



   উলু জামে মসজিদের একটি দুর্লভ ভিডিও 



Post a Comment

0Comments

Thanks everyday

Post a Comment (0)
To Top