শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠুক আমাদের মসজিদ। May our mosque be full of children walking.

2

   শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হোক আমাদের মসজিদ।

শিশুদের সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন;
শিশুরা হল জান্নাতের প্রজাপতি' (মিশকাত শরিফ)
আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি ছোটদের দয়া আর বড়দের শ্রদ্ধা করেনা সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত না!
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ১/৬)

শিশুরা স্বভাবতই আমোদপ্রিয়, ছোটাছুটিপ্রিয়। তারা চঞ্চল, চাঞ্চল্যই তাদের স্বভাব। শিশুরা হাসি আনন্দেরও প্রতীক। উৎফুল্লতা এবং মুগ্ধতারও পরিচায়ক। 
এই কারণে তাদেরকে মসজিদে নিয়ে এলে একটু আধটু ছোটাছুটি যে তারা করবে, এতে অস্বাভাবিকতারও কিছু নেই। এর বিপরীতে এটাও সঠিক যে, মসজিদ আমোদ আহ্লাদ কিংবা হৈ হল্লার কোনো স্থান নয়, মসজিদ বরং নিঃসন্দেহে ইবাদত বন্দেগীরই জায়গা, ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ নিরব এবং শান্ত পরিবেশই মসজিদের জন্য কাঙ্খিত। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য এই কঠোর নিয়ম পূর্ণভাবে মেনে চলা সহজ নয় এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শিশুদের থেকে এমন আচরণ প্রত্যাশাও করা যাবে না,শিশু শিশুই। তাদের থেকে বড়দের মতো আচরণ প্রত্যাশা করার যুক্তি নেই। একটু সুযোগ পেলে তারা কথা বলে উঠবে, হাসি খেলায় মত্ত হবে, কাতারের ভেতরে বা পেছনে একটু আধটু হইহুল্লোড় বা আমোদ ফুর্তিতেও মেতে উঠবেই। তাই বলে তাদেরকে মসজিদ থেকে দূরে সরিয়ে রাখাই কি এর প্রজ্ঞাপূর্ণ সমাধান? 
না, এমনটা সমাধানের পথ হতে পারে না। 
এই সমস্যার সমাধান এভাবে করা উচিতও নয়। 

মসজিদের ভাবগাম্ভীর্য এবং শৃঙ্খলা রক্ষার অযুহাতে বাচ্চাদের মসজিদমুখী করা হতে বিরত থাকার নীতি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। 
এটি সুন্নাহসম্মত পথ এবং পদ্ধতিও নয়। 

তাহলে সুন্নত সম্মত পদ্ধতি এবং পথ কোনটি?

এ  প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেতে হলে  জানতে হবে মসজিদে বাচ্চাদের সাথে নবীজি (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কেরামের আচরণ কেমন ছিল!

তো চলুন, দেখে নিই মসজিদে বাচ্চাদের সাথে রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের আচরণ কেমন ছিল,

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের প্রতি ছিলেন সর্বাধিক স্নেহপ্রবন, সবচেয়ে দরদী, সবার থেকে প্রিয়জন, মসজিদে কিংবা মসজিদের বাইরে, সর্বাবস্থায়ই শিশুদের প্রতি সর্বাধিক কোমল আচরণের প্রকাশ লক্ষ্য করা যেত তার থেকে। 

তিনি শিশুদেরকে আনন্দ দিতেন; কখনও কখনও  শিশুদেরকে কাঁধে চড়িয়ে আদর পর্যন্ত করতেন। তাদের আহ্লাদ-আবদার পুরন করতেন। 

যেমন, এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

* আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সম্মুখে আসলেন। তখন উমামাহ বিনতি আবুল ’আস (নবীজীর কন্যা যয়নব রা. -এর মেয়ে) তাঁর কাঁধের উপরে ছিলেন। এই অবস্থায় নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দন্ডায়মান হলেন। যখন তিনি রুকূতে যেতেন, তাকে নামিয়ে রাখতেন, আবার যখন উঠে দাঁড়াতেন, তখন তাকেও উঠিয়ে নিতেন। 
-সহীহ বুখারী, হাদীস নং আধুনিক প্রকাশনী-৫৫৬১, ইফা প্রকাশনী- ৫৪৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৪৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৯১৮; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৮২৭, ১২০৫

* রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করতেন, তখন তাঁর নাতিদ্বয়  হাসান ও হুসাইন (রা.) কখনো কখনো তাঁর ঘাড়ে চড়ে বসতেন, এমনকী তাদের এ খেলায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে, সে কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদায় কিছু বেশি সময় অতিবাহিত করতেন। 
সাহাবিরাও (রাঃ) তা প্রত্যক্ষ করতেন।

* আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। তখন (শিশু) হাসান ও হোসাইন (রাঃ)  সামনে এসে দাঁড়ালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বার থেকে নেমে এসে তাদের উভয়কে কোলে তুলে নিলেন 
এবং বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্য বলেছেন, 
’’তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো পরীক্ষা বিশেষ ’’ 
(সূরা তাগাবুনঃ ১৫)
এ দু’জনকে দেখে আমি ধৈর্য ধারণ করতে পারলাম না। 
অতঃপর তিনি আবার খুতবা দিতে শুরু করেন।
-ইবনে মাযাহ ৩৬০০, তিরমিযী ৩৭৭৪, নাসায়ী ১৪১৩, আহমাদ ২২৪৮৬, সহীহ আবু দাউদ ১০১৬ হাদিসের মান- সহীহ তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ২০৯৫, ১০/৪০ নং পৃষ্ঠা

*  আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন, আমি দশ (বা নয়) বছর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করেছি-আল্লাহর কসম! কোনো দিন আমাকে ‘উফ’ বলেননি। আমি (অযাচিত) কোনো কিছু করে ফেললে বলেননি- এটা কেন করলে? তেমনি কোনো কাজ না করলে বলেননি- এটা কেন করলে না? 
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩০৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৭৭৩

রুবাঈ বিনতে মুয়াওবিয ইবনে আফরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
অত:পর আমরা এ দিন (আশুরার দিন) সিয়াম পালন করতাম এবং আমাদের ছোট ছোট সন্তানদেরকেও আল্লাহ চাহে তো সিয়াম পালনে অভ্যস্ত করে তুলতাম। আমরা তাদেরকে মসজিদে নিয়ে যেতাম এবং তাদেরকে পশমের খেলনা বানিয়ে দিতাম। যখন তারা খাওয়ার জন্য কাঁদত, তখন আমরা তাদেরকে সে খেলনা প্রদান করতাম। এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত। 
-সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ১৪/ সিয়াম (রোজা) পরিচ্ছেদ: ১৯. 

মসজিদে শিশু কিশোরদের সাথে নবীজি এবং সাহাবায়ে কেরামের আচরণ কেমন ছিল এ বিষয়টি উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে  স্পষ্ট , 

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সাহাবায়ে কেরাম কখনো কোন কারণে শিশুদেরকে ধমক বা বকাঝকা করেন নি , এমনকি শিশুদের ভুলভ্রান্তিতে বিরক্তিও প্রকাশ করেন নি।

মসজিদে ছোটরা এলে দুষ্টুমি করবে-এটাই স্বাভাবিক।  কেননা, একটি শিশু বয়সের দিক থেকে যেমন শিশু,    তেমনি বুঝ, জ্ঞান, বুদ্ধি সবকিছুতেই তার শিশুসুলভ আচরণই প্রত্যাশিত। 

এই বিষয়গুলো মনে রাখলে খুব সহজেই বিবেচনায় রাখা সম্ভব যে, শিশুদের কথা, কাজ, চলাফেরা সবকিছুতেই ভুল হওয়া স্বাভাবিক। তাদের ভুল-ভ্রান্তির জন্য ধমক দেওয়া, তিরস্কার করা বা বিরক্তি প্রকাশ করা উচিত নয়। হাঁ, তাদের সংশোধনের উদ্দেশ্যে কোমল শাসন তো করতেই হবে, যাতে তারা সচেতন হয়। তবে তা অবশ্যই হতে হবে সস্নেহ এবং হৃদ্যতাপূর্ণ; ধিক্কার, তিরষ্কার বা ধমক দিয়ে নয়।

বরং আমাদেরকে বাচ্চাদের উপস্থিতি মসজিদগুলোতে বাড়ানোর প্রতিই  মনযোগী হতে হবে।                    মসজিদের দরজাকে তাদের জন্য অবারিত করে দিতে হবে। আল্লাহর ঘরের দুয়ার বরং সকল শ্রেণির মানুষের জন্য সদা উম্মুক্ত রাখার ব্যবস্থাকেই সুসংহত করতে হবে। প্রতিবন্ধকতার সকল ঝঞ্জাট সরিয়ে বিশেষত বাচ্চাদের মসজিদে আসার পথকে ছন্দে-আনন্দে পূর্ণ করে তুলতে হবে। তারা যেন মসজিদে এসেই তাদের প্রাণের খোড়াক লাভ করতে পারে। তারা যেন মসজিদে আসতে পারে নির্ভয়ে এবং নির্ভাবনায়, শঙ্কাহীন চিত্তে। মসজিদের সাথে যাতে তাদের কায়েম হতে পারে অবিচ্ছিন্ন এমনই এক দৃঢ় বন্ধন, যার সুতো প্রোথিত থাকবে মহান মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এবং তার ঘর মসজিদের ভালোবাসার অতলান্ত গভীরে। তারা যেন মসজিদে আসতে পারে আবাবীল পাখির মত- ঝাকে ঝাকে, দলে দলে, হর্ষধ্বনিতে, আনন্দিতচিত্তে। ছোট্ট এই পাখিদের মসজিদে আগমনের ফুলের পথ আকীর্ণ হোক প্রাণের টানে, প্রাণোচ্ছলতায়। তারা আসুক মসজিদে,নামাজ আদায় করুক, আনন্দের সাথে বিচরণ করতে থাকুক মসজিদের কাতারে কাতারে, পুরো মসজিদ জুড়েই থাকুক তাদের অবাধ বিচরণের অধিকার। ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ মসজিদের পিনপতননিরব পরিবেশকে প্রাণপ্রাচুর্য্যে ভরিয়ে তুলুক তারা কখনও কখনও, বৈচিত্র্যতায় মুগ্ধ করে তুলুক ইবাদতগুজার বান্দাদের মসজিদের বিমুগ্ধ পরিবেশ-প্রতিবেশ, চোখ জুড়ানো এমন দৃশ্যই প্রতিভাত হয়ে উঠুক পৃথিবীর প্রতিটি মসজিদে মসজিদে। এ শিক্ষাই পাই আমরা সিরাত থেকেসুতরাং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম যেখানে শিশুদেরকে কিছু বলেননি  সেখানে আমরা কিভাবে তাদেরকে ধমকাতে পারি!!   

এ অধিকার আমাদেরকে কে দিল?

তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের অনেক মসজিদের দেওয়ালে একটা কথা লেখা আছে। 
কথাটি হলো:
‘মুহতারাম, নামাজ পড়ার সময় যদি পেছনের সারি থেকে বাচ্চাদের হাসির আওয়াজ না আসে তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের ব্যাপারে ভয় করুন।’

পরিশেষে এটাই বলবো, শিশুরা অনুকরণকারী হয়ে থাকে, তাই আমাদের উচিত হবে শিশু বয়স থেকেই তাদের ভালো বিষয়ে অভ্যাস গড়ে তোলা। তাহলেই বড় হয়ে একজন সৎ মানুষ ও খোদাভীরু হয়ে উঠবে। ইনশাআল্লাহ! 

Ofde islam
সাআদ ✔ Verified
Founder | Creative Lead - বাংলাদেশ






Post a Comment

2Comments

Thanks everyday

Post a Comment
To Top