উমাইর (রা.)-এর আত্মত্যাগ: জান্নাতের জন্য প্রস্তুতি ও শিক্ষা । প্রেরণার হাদীস

0

 


عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ:

"قُومُوا إِلَى جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ."

فَقَالَ عُمَيْرُ بْنُ الحُمَامِ الْأَنْصَارِيُّ: يَا رَسُولَ اللَّهِ جَنَّةٌ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ؟

قَالَ: "نَعَمْ."

فَقَالَ: بَخٍ بَخٍ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: "مَا يَحْمِلُكَ عَلَى قَوْلِكَ بَخٍ بَخٍ؟"

قَالَ: لَا وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِلَّا رَجَاءَ أَنْ أَكُونَ مِنْ أَهْلِهَا، قَالَ: "فَإِنَّكَ مِنْ أَهْلِهَا."

فَأَخْرَجَ تَمَرَاتٍ مِنْ قَرَنِهِ فَجَعَلَ يَأْكُلُ مِنْهُنَّ، ثُمَّ قَالَ: لَئِنْ أَنَا حَيِيتُ حَتَّى آكُلَ تَمَرَاتِي هَذِهِ، إِنَّهَا لَحَيَاةٌ طَوِيلَةٌ. فَرَمَى بِمَا كَانَ مَعَهُ مِنَ التَّمْرِ، ثُمَّ قَاتَلَ حَتَّى قُتِلَ.

✔ সহিহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ  (كتاب الإمارة), হাদিস নম্বর: ১৯০১


হাদিসের বাংলা অর্থ:

আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত:

নবী করিম ﷺ বললেন,

"তোমরা এমন জান্নাতের দিকে এগিয়ে চলো, যার প্রশস্ততা আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সমান!"

এ কথা শুনে উমাইর ইবনুল হুমাম আনসারি (রা.) বললেন,

"হে আল্লাহর রাসুল! সত্যিই কি জান্নাতের প্রশস্ততা আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সমান?"

রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, "হ্যাঁ!"

তখন উমাইর (রা.) আনন্দ ও বিস্ময়ে বললেন, "বাহ! বাহ!"

রাসুলুল্লাহ ﷺ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, "তুমি ‘বাহ! বাহ!’ বললে কেন?"

উমাইর (রা.) বললেন,

"হে আল্লাহর রাসুল! কেবল এই আশায় বলেছি যে, আমি যেন সেই জান্নাতের অধিবাসী হতে পারি।"

রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, "তুমি জান্নাতের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত!"

এরপর উমাইর (রা.) তার তলোয়ারের মiyan (মাঝের অংশ) থেকে কয়েকটি খেজুর বের করলেন এবং খেতে শুরু করলেন। তারপর বললেন,

"যদি আমি এই খেজুরগুলো শেষ না করা পর্যন্ত জীবিত থাকি, তবে সেটাই অনেক দীর্ঘ জীবন হবে!"

এ কথা বলেই তিনি খেজুরগুলো ফেলে দিলেন এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করলেন, অবশেষে শহীদ হয়ে গেলেন।


— [সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ১৯০১]


এই হাদিস থেকে প্রাপ্ত কিছু শিক্ষা:

---

উমাইর ইবনুল হুমাম আনসারি (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর ঘটনা আমাদের কাছে একটি অনুপ্রেরণাদায়ক পাঠ হিসেবে আসে, যা জান্নাতের প্রতি তৃষ্ণা, ঈমানের দৃঢ়তা, এবং আল্লাহর রাস্তায় আত্মত্যাগের মানসিকতা সম্পর্কে গভীর শিক্ষা দেয়। এই হাদিস থেকে আমরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি:

---

১. জান্নাতের প্রতি গভীর আগ্রহ এবং আকাঙ্ক্ষা:

উমাইর (রা.) জান্নাতের প্রশস্ততার কথা শুনে বিস্মিত ও আনন্দিত হয়ে ওঠেন। তাঁর অনুভূতি ছিল, জান্নাতের প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর সমান, এবং এর জন্য তিনি আরও বেশি চেষ্টা করতে চাইলেন।

শিক্ষা:

এটি আমাদের শেখায় যে, একজন মুমিনের জন্য জান্নাতের আকাঙ্ক্ষা ও ইচ্ছা হওয়া উচিত। জান্নাত হল সেই স্থানে যেখানে আল্লাহর নৈকট্য পাওয়া যায়, এবং আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত সেই জান্নাতে প্রবেশ করা।

---

২. রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কথা বিশ্বাস করা এবং বাস্তবে পরিণত করা:

রাসুলুল্লাহ ﷺ যখন উমাইর (রা.)-কে জান্নাতের বর্ণনা দিলেন, তখন তিনি তা পুরোপুরি বিশ্বাস করলেন। উমাইর (রা.) তার শব্দের মাধ্যমে শুধু আনন্দ ও বিস্ময় প্রকাশ করেননি, বরং জান্নাতের প্রতি তার দৃঢ় বিশ্বাস ও প্রত্যাশা ছিল। শিক্ষা:

এটি আমাদের শেখায় যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর প্রতিটি কথাকে বিশ্বাস করা উচিত, এবং যা তিনি বলবেন তা আমাদের জীবনের মূল ভিত্তি হওয়া উচিত। যদি রাসুল ﷺ বলেছেন যে, জান্নাত প্রশস্ত, তাহলে আমাদের উচিত এই সত্যকে বিশ্বাস করা এবং সেই জান্নাতের জন্য প্রচেষ্টা করা।

---

৩. দুনিয়ার জীবনের প্রতি নির্লিপ্ততা:

উমাইর (রা.) যখন জান্নাতের কথা শুনে একেবারে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন, তখন তিনি তার কাছে থাকা খেজুরগুলো ফেলে দেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, পৃথিবীর সামান্য বস্তুও জান্নাতের তুলনায় কিছু নয়।

শিক্ষা:

এটি আমাদের শেখায় যে, আমাদের উচিত দুনিয়ার সমস্ত বিলাসিতা এবং অস্থায়ী আনন্দ থেকে বিরত থাকা, এবং আখিরাতের চিন্তা করা। দুনিয়াতে যতই আমরা আরাম বা সুখ লাভ করি, তা আখিরাতের তুলনায় সামান্যই। তাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত আখিরাতের ভালোবাসা এবং প্রস্তুতি।

---


৪. শাহাদাতের প্রতি ভালোবাসা:

উমাইর (রা.) তার খেজুরগুলো ফেলে দিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হন। তার এই আত্মত্যাগ এবং সাহসিকতা প্রদর্শন করে যে, তিনি জান্নাত লাভের জন্য মৃত্যুকে স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিলেন।

শিক্ষা:

এটি আমাদের শেখায় যে, একজন মুসলিমের উচিত আল্লাহর পথে নিজের জীবন উৎসর্গ করা। জীবনধারণের মূল উদ্দেশ্য যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়, তবে শাহাদাতের প্রতি ভালোবাসা এবং তাকে পেতে চেষ্টা করা উচিত।

---

৫. নেক আমলের প্রতি দ্রুততা:

উমাইর (রা.) জানতেন যে, জান্নাতের দিকে যাওয়ার পথ অনেক কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ। তাই তিনি জীবনের সামান্যতম সময়ও নষ্ট করতে চাননি। তাঁর খেজুরগুলো খাওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন যে, এটি জীবনের দীর্ঘায়ু হতে পারে, তবে তিনি তা নষ্ট করতে চান না।

শিক্ষা:

এটি আমাদের শেখায় যে, একজন মুসলিমের উচিত তার সময়ের মূল্য বুঝে নেক আমলে মনোযোগী হওয়া। কোনো নেক কাজ করতে দেরি করা বা সময়ক্ষেপণ করা উচিত নয়, বরং যত দ্রুত সম্ভব সেগুলো সম্পন্ন করা উচিত।

---

৬. আল্লাহর পথে আত্মত্যাগ:

উমাইর (রা.) জান্নাতের আশায় নিজের জীবনের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা ত্যাগ করেছেন। তিনি বুঝেছিলেন যে, আল্লাহর পথে আত্মদানই সত্যিকারের সফলতা।

শিক্ষা:

এটি আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে উৎসর্গ করা, কষ্ট সহ্য করা এবং অন্যের জন্য ভাল কাজ করা—এইসবই আসল সফলতা। একজন মুসলিমের উচিত আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাস রেখে জীবনযাপন করা এবং কখনো মনে না করা যে দুনিয়ার কোনো কিছু চিরস্থায়ী।

---

উপসংহার:

এই হাদিসটি আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। জান্নাতের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা, আল্লাহর রাস্তায় আত্মদান, রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর প্রতিটি নির্দেশনা অনুসরণ করা, এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুত থাকা—এই সমস্ত শিক্ষা গ্রহণ করা আমাদের জীবনে ইসলামের মৌলিক মূলনীতি অনুসরণের পথকে আরও সুগম করবে।

এটি আমাদের অনুপ্রাণিত করে, যেন আমরা জান্নাতের দিকে মনোনিবেশ করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি।

             © Ofde islam 


               




Post a Comment

0Comments

Thanks everyday

Post a Comment (0)
To Top