স্বপ্নের সাম্রাজ্য
১২৮০ খ্রিষ্টাব্দ। উসমান বিন এরতুগরুল তখন টগবগে যুবক।
দেহের শিরা- উপশিরায় যৌবনের উচ্ছ্বাস।
তখনো বিয়েশাদি করেননি।
তখনকার সময়ে একজন প্রসিদ্ধ আলিম ও বুজুর্গ ছিলেন শায়খ ‘এদেবালি' (Edebali)। তিনি উসমান বিন এরতুগরুলের জায়গিরে বসবাস করতেন।
তিনি এমন একজন "মুসতাজাবুদ দাআওয়াত” আল্লাহর অলি ছিলেন।
লোকেরা তাঁকে খুবই সম্মান করত। তাঁর কাছ থেকে দুআ নিতে ভিড় জমাতো। তাঁর কাছ থেকে মাসআলা- মাসায়িল ও ফাতওয়া জিজ্ঞেস করত।
তিনি ছিলেন উসমান বিন এরতুগরুলেরও শায়খ এবং শ্রদ্ধার পাত্র।
তাঁর ঘরে উসমান নিয়মিত যাওয়া-আসা করতেন। উপদেশ শুনতেন।
শায়খের একটা মেয়ে ছিল—‘রাবেয়া বালা খাতুন'।
একদিন হঠাৎ করেই যুবক উসমানের দৃষ্টি পড়ে যায় বালা খাতুনের ওপর।
বালা খাতুনের সৌন্দর্যে তিনি নিজেকে হারিয়ে ফেলেন! আপন শায়খের ঘরেই যে তাঁর এক রূপবতী ললনা আছে,
তা তিনি জানতেন না। বালা খাতুনের সৌন্দর্যে তিনি এতটাই অভিভূত হয়ে পড়েন।
এভাবে কতক্ষণ কেটে গেছে তিনি বুঝতেই পারেননি!
সংবিৎ ফিরে পেতেই তিনি দৃষ্টি সংযত করে নেন।
দৃষ্টি সংযত করে নেন ঠিকই; কিন্তু বালা খাতুন তাঁর হৃদয় দখল করে নেয়।
একে তো একজন বুজুর্গের কন্যা; তার ওপর সুন্দরী।
তাই উসমান বালা খাতুনকেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন; কিন্তু শায়খকে কীভাবে বলবেন, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান।
যাক, তবু একবার সাহস করে বলেই ফেলেন,
-আফেন্দি! একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম....
-কী, বলো?
-না, মানে...
-না মানে কী? নিঃসংকোচে বলতে পারো!
-আপনার সাহেবজাদিকে আমি 'আহলিয়া' (স্ত্রী) হিসেবে কবুল করতে চাচ্ছিলাম...।
-না!
- আফেন্দি! যদি আপনার অনুমতি হয়, তাহলে আমি মনে করি আমার দুনিয়া- আখিরাতে কল্যাণ হবে...
-না!
কী আর করা, যুবক উসমান ব্যর্থ মনোরথে ফিরে গেলেন।
শায়খ এদেবালি প্রথমে বাহ্যিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন; কিন্তু উসমান তো নাছোড়বান্দা।
শায়খের দরবারে বার বার এ আরজি নিয়ে হাজিরা দিচ্ছেন;
আর শায়খ তাঁর না-বাচক সিদ্ধান্তের ওপর উপত্যকার জগদ্দল পাথরের মতো জমে আছেন।
একদিন উসমান শায়খের খানকায় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।
ঘুমের মধ্যে তিনি একটি আশ্চর্যজনক স্বপ্ন দেখেন।
ঘুম থেকে জেগে শায়খকে নিজের স্বপ্নের কথা
জানান-
-আফেন্দি! আমি এখন একটি আশ্চর্যজনক স্বপ্ন দেখেছি!
-কী স্বপ্ন?
—দেখেছি, আপনার বুক থেকে একটি সূর্য বের হয়ে আমার বুকে প্রবেশ করে।
এরপর সূর্যটি আমার মেরুদণ্ড থেকে একটি বৃক্ষের অঙ্কুর হয়ে আত্মপ্রকাশ করে।
অঙ্কুরটি তৎক্ষণাৎ বড় হয়ে ডালপালা আর পত্রপল্লবে সুশোভিত হয়ে যায়।
তারপর একটি বিরাট বৃক্ষে রূপান্তরিত হয়ে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
পৃথিবী-ছড়ানো এ বৃক্ষের ডালপালার নিচে গগনচুম্বী পাহাড় আর পাহাড়।
পাহাড়ের তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কতগুলো নদী। লোকজন এসে সেই বৃক্ষের ছায়া গ্রহণ করছে, ফল আহরণ করছে; আর নিজেদের এবং নিজেদের গবাদিপশু ও বাগানের জন্য নদী থেকে পানি সংগ্রহ করছে!
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, বৃক্ষের ডালগুলো দেখতে তলোয়ারের মতো ছিল।
উসমানের স্বপ্ন শুনে শায়খ এদেবালি আশ্চর্য হন।
তিনি একবার গভীরভাবে পরখ করে নেন উসমানের আপাদমস্তক।
তিনি বুঝতে পারেন, এ উসমানকোন সাধারণ পুরুষ নন, অন্যান্য, অসাধারণ কোনো মহাপুরুষ,
অচিরেই তিনি এক মহান ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হবেন।
তিনি আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, 'মাশাআল্লাহ, খুব সুন্দর স্বপ্ন!
অচিরেই তুমি এক মহান সুলতান হবে।
তোমার বিশাল সাম্রাজ্য হবে। তোমার ও তোমার বংশের শাসকদের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ উপকৃত হবে।
এবার আমি আমার কন্যা বালাকে তোমার সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারি।'
পরক্ষণেই শায়খ এদেবালি বিয়ে পড়িয়ে তাঁর কন্যাকে উসমানের হাতে তুলে দেন।
সম্পূর্ণ অলৌকিকভাবে তাঁর পছন্দের মেয়েকে পেয়ে যান উসমান।
বালা খাতুনকে নিয়ে সাজিয়ে তুলেন সুখের সংসার।
দিন যায় রাত আসে, রাত যায় দিন।
একদিন বালার কোলজুড়ে আগমন হয় ফুটফুটে এক শিশুর। উসমান সন্তানের নাম রাখেন—উরখান (Orhan), যিনি তাঁর পিতা উসমান গাজির পরই উসমানি সালতানাতের ক্ষমতার বাগডোর হাতে নেন।
হ্যাঁ, পরবর্তী সময়ে এই স্বপ্নটি বাস্তবে রূপলাভ করেছিল।
উসমান বিন এরতুগরুলের বংশধর উসমানি সুলতানরা গোটা মুসলিমবিশ্ব শাসন করেছিলেন একাধারে ৬০০ বছর।
১২৯৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মুসলিমবিশ্বের।
উসমান বিন এরতুগরুলের দিকেই সম্বন্ধ করে বলা হয় ‘উসমানি খিলাফত বা উসমানি সাম্রাজ্য'।"
ওসমানী খেলাফতের স্বর্ণ কণিকা।
আমাদের আর্টিকেল গুলো ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করে বন্ধুদের কাছে পৌঁছে দিন।
ReplyDelete