আমাদের শহরগুলোও শাসন করুন
সেলজুক সাম্রাজ্যের পতনের পর আনাতোলিয়াকেন্দ্রিক কিছু বেইলিক (বিভিন্ন তুর্কি বসতি) ও মোঙ্গলদের করদরাজ্য উসমানি খিলাফতের শাসনের বাইরে থেকে গিয়েছিল। উসমানি সুলতানরা সেই রাজ্যগুলোকেও খিলাফতের শাসনাধীন করে নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। খিলাফত ও ঐক্যের দাবিও ছিল সেটাই। এমনই একটি রাজ্য ছিল একসময়ের শক্তিশালী সেলজুক সাম্রাজ্যের রাজধানী কোনিয়া। সেলজুক সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদের পর যা একপ্রকার মোঙ্গলদের করদরাজ্য হয়ে গিয়েছিল বললেই চলে।
সুলতান প্রথম বায়েজিদ কোনিয়াকে খিলাফতের শাসনাধীন করতে যখন সৈন্য- সামন্ত নিয়ে কোনিয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছান, তখন ছিল ফসল কাটার মৌসুম। গম-যবের রাশি রাশি স্তূপ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছিল কোনিয়ার চারদিকে। উসমানি সেনাদলের আগমন টের পেয়ে জনসাধারণ ভয়ে দুর্গে আশ্রয় নিয়ে ফটক বন্ধ করে দেয়।
দীর্ঘ অবরোধের কারণে একসময় উসমানি সেনাদলের ঘোড়ার খাদ্যসংকট দেখা দেয়। সুলতান প্রথম বায়েজিদ সেনাবাহিনীকে আদেশ দেন, 'যাও, তোমরা দুর্গের প্রাচীরের নিচে গিয়ে উঁচু আওয়াজে বলো – “হে দুর্গবাসী, আপনারা নিচে নেমে আসুন। ঘোড়ার দানাপানির জন্য আমরা আপনাদের গম-যব খরিদ করব। ”
সুলতানের আদেশমতে সেনাবাহিনী দুর্গবাসীকে এ সংবাদ পৌঁছে দেয়। আওয়াজ শুনে কিছু লোক দুর্গ থেকে নিচে নেমে আসে। তারা উসমানি সেনাবাহিনীর কাছে গিয়ে জানতে চায়— 'উসমানিরা যা বলছে, তা আসলেই সত্য কি না!'
সুলতান যখন বিষয়টি জানতে পারেন, সেনাবাহিনীকে উপদেশ দিয়ে বলেন, "দেখো, এরা তোমাদের দীনি ভাই। তাদের ওপর জুলুম করা থেকে নিজেদের বিরত রাখবে। তাদের অধিকার সংরক্ষণ করবে। তাদের থেকে গম-যব খরিদ করবে, তাদের চাহিদামতো মূল্য পরিশোধ করবে।
সেনারা সুলতানের আদেশে তা-ই করে। যারা দুর্গ থেকে নিচে নেমে এসেছিল, তারা তাদের চাহিদামতো মূল্য পেরে পুশিমনে দুর্গে ফিরে যায়।
দূর্গবাসী উসমানিদের কাছ থেকে এমন অন্তর প্রশান্তকারী মানবিক আচরণ পেয়ে দুর্গের প্রধান ফটক খুলে দেয়। সুলতানকে উন্ন অভ্যর্থনা জানিয়ে দুর্গে বরণ করে নেন। এই খবর যখন আশপাশের অঞ্চল ও শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে, তখন শহরগুলোর বাসিন্দারাও উসমানিদের দাওয়াত দিয়ে বার্তা পাঠায় 'আসুন, আমাদের শহরগুলোও শাসন করুন।
Thanks everyday