১. কোরআন তেলাওয়াত
আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত
আল্লাহ তাআলা কোরআনে
বলেছেন—
"যারা কিতাব পাঠ করে,
নামাজ কায়েম করে এবং আমি
যা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করে যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে
না।"
(সূরা ফাতির: ২৯)
২. কিয়ামতের দিনে সুপারিশ করবে
হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন—
إَنْ أَبِي أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: "اقْرَءُوا الْقُرْآنَ، فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ
(رواه مسلم: 804)
"কোরআন পড়ো,
কারণ তা কিয়ামতের দিন তার
পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হিসেবে উপস্থিত হবে।"
(সহিহ মুসলিম: ৮০৪)
৩. প্রতি অক্ষরের
জন্য সওয়াব
রাসুল (সা.) বলেছেন—
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ،
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ:
"مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لَا أَقُولُ: (الٓمٓ) حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ، وَلَامٌ حَرْفٌ، وَمِيمٌ حَرْفٌ."
বাংলা অনুবাদ:
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
(রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
যে ব্যক্তি আল্লাহর
কিতাবের একটি অক্ষর পড়ে, তার জন্য এক নেকি
রয়েছে, আর প্রতিটি নেকি দশ গুণ বৃদ্ধি
করা হয়। আমি বলছি না যে 'আলিফ-লাম-মীম'
একটি অক্ষর; বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, এবং মীম একটি অক্ষর।
(সুনান আত-তিরমিজি: ২৯১০, সহীহ)
৪. অন্তর প্রশান্তি
লাভ করে
আল্লাহ তাআলা বলেন—
"নিশ্চয়ই আল্লাহর
জিকিরের মাধ্যমে হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে।"
(সূরা রাদ: ২৮)
৫. মর্যাদা বৃদ্ধি
পায়
রাসুল (সা.) বলেছেন—
عَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّةُ عَنْهُ
قَالَ:
"قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: "خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ."
বাংলা অনুবাদ:
আবু হুরায়রা (রা.)
থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
"তোমাদের মধ্যে সেরা
সেই ব্যক্তি, যে কুরআন শিখে এবং
অন্যদের শেখায়।"
(সহীহ বুখারী: ৫০৪৩)
"তোমাদের মধ্যে সেই
ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কোরআন শেখে এবং
অন্যকে শেখায়।"
(সহিহ বুখারি: ৫০২৭-৫০২৮ )
৬. জান্নাতে উচ্চ
মর্যাদা লাভ
হাদিসে এসেছে—
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا
يَحْيَى، عَنْ سُفْيَانَ، حَدَّثَنِي عَاصِمُ بْنُ بَهْدَلَةَ، عَنْ زِرٍّ، عَنْ
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
" يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ
تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا
" .
"যে ব্যক্তি কোরআন
পাঠ করবে এবং তা অনুসরণ করবে, তার জন্য কিয়ামতের
দিন বলা হবে, ‘তিলাওয়াত করো এবং
ওপরে উঠতে থাকো, তুমি যেমন দুনিয়াতে
পাঠ করতে, তেমনি পড়তে থাকো,
কারণ তোমার স্থান নির্ধারিত
হবে যেখানে তুমি সর্বশেষ আয়াত পাঠ করবে।"
(আবু দাউদ: ১৪৬৪, তিরমিজি: ২৯১৪)
৭. গোনাহ মাফের মাধ্যম
রাসুল (সা.) বলেছেন—
مَن قَرَأَ عَشْرَ آيَاتٍ فِي لَيلَةٍ لَم يُكتَبْ مِنَ الغَافِلِينَ
"যদি কোনো ব্যক্তি
রাতে কোরআনের দশটি আয়াত তেলাওয়াত করে, তবে সে গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হবে না।"
সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণ কোরআন শিখতে এবং শেখাতে গভীর আগ্রহী ছিলেন।
🔹 আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন—
"যে ব্যক্তি কোরআন শিখতে চায়, সে যেন আমাদের মতো শিখে, কারণ আমরা কোরআন শিখেছি নবীজির নিকট থেকে সরাসরি।"
সাহাবারা কোরআন তেলাওয়াতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন এবং কোরআনের প্রতিটি শব্দে গভীর মনোযোগ দিতেন।
🔹 "উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) এক রাতে কোরআন তেলাওয়াত করতে গিয়ে সূরা তোবা-এর একটি আয়াত শুনে এতটাই প্রভাবিত হন যে, তিনি কেঁদে ফেলেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন।"
সাহাবারা কোরআনের হুকুম অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করতেন।
🔹 "উমর এবং সকল খলিফা সাহাবি (রা.) খিলাফত চলাকালীন বিচারকার্য পরিচালনা করতেন কোরআনের বিধান অনুসারে।"
"আমি যদি কোরআন ও নবীর সুন্নাহ অনুসারে চলি, তবে আমার আনুগত্য করো। আর যদি আমি পথভ্রষ্ট হই, তবে আমাকে সংশোধন করো।"
🔹 ফুজাইল ইবনে আইয়াজ ছিলেন এক দস্যু, কিন্তু এক রাতে তিনি শুনলেন—
"তবে কি সে সময় আসেনি, যখন মুমিনদের অন্তর কেঁপে উঠবে আল্লাহর স্মরণে?" (সূরা হাদিদ: ১৬)
এই আয়াত শুনে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং জীবনের পরিবর্তন আনেন।
🔹 হাসান বসরি (রহ.) বলতেন—
"সাহাবারা কোরআনের একটি আয়াত মুখস্থ করলে তা বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত অন্যটি মুখস্থ করতেন না।"
🔹 ইমাম আবু হানিফা (রহ.) রাতে দীর্ঘ সময় কোরআন তেলাওয়াত করতেন এবং এক রাতে সূরা বাকারা পড়েই কাটিয়ে দিতেন।
✅ অন্যায়, অশান্তি ও বিভ্রান্তি দূর হয়।
✅ পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়।
✅ আল্লাহর ভালোবাসা ও রহমত লাভ হয়।
সমাপ্তি :
কোরআন তেলাওয়াত কেবল সওয়াব অর্জনের মাধ্যম নয়, বরং এটি মুমিনের জীবনের পাথেয়, গাইডলাইন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের গুরুত্বপূর্ণ উপায়। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের জীবনে কোরআনের প্রভাব ছিল গভীর ও সুদূরপ্রসারী। তাঁরা কোরআন শুধু পড়তেন না, বরং প্রতিটি আয়াতের উপর চিন্তা করতেন, তা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতেন এবং সমাজে ছড়িয়ে দিতেন। আমাদেরও উচিত তাঁদের মত কোরআনের প্রতি গভীর ভালোবাসা রাখা ও আমল করা।
Thanks everyday