আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা ও মুসলিম বিশ্ব । Ofde islam

0

বিজ্ঞান ও মুসলিম সভ্যতা
 
অভিধান খুললে ‘বিজ্ঞান’ শব্দের অর্থ পাওয়া যায়—বিশেষ জ্ঞান বা বিশেষভাবে আহরিত, বিস্তৃত ও সুশৃঙ্খল জ্ঞান। তবে বিজ্ঞান কেবল তথ্যভিত্তিক জ্ঞান নয়; এটি গবেষণা ও অনুসন্ধানের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিরই অন্যতম অংশ হলো বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা মানুষকে প্রকৃতি ও জগতকে জানার এবং নতুন কিছু আবিষ্কারের ক্ষমতা প্রদান করে। প্রকৃতিকে জয় করার এই নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা বহু শতাব্দী ধরে চলমান।
 
মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান:

আজকের বিজ্ঞানের অগ্রগতির শেকড় গভীরভাবে প্রোথিত মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদানে। তাদের এই অগ্রযাত্রার স্পষ্ট প্রতিচ্ছাপ রয়ে গেছে বিজ্ঞানের জটিল ও বৈচিত্র্যময় পথচলায়। উদাহরণস্বরূপ—

রসায়নের জনক – জাবির ইবনে হাইয়ান
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক – ইবনে সিনা
আলোক বিজ্ঞানের জনক – ইবনে আল-হাইসাম
বীজগণিতের জনক – আল-খাওয়ারিজমি
সর্বপ্রথম নির্ভুল মানচিত্র প্রস্তুতকারী – আল-ইদরিসি
হৃদপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন আবিষ্কারক – ইবনুন নাফিস
প্রথম স্বয়ংক্রিয় মেশিন উদ্ভাবক – আল-জাজারি
ত্রিকোণমিতির উন্নয়নকারী – আবুল ওয়াফা
 
এছাড়াও গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসা, প্রকৌশল ও অন্যান্য ক্ষেত্রে মুসলিম বিজ্ঞানীরা যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন, যা পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় রেনেসাঁসের ভিত্তি গড়ে তোলে।
 
আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা ও মুসলিম বিশ্ব :
 
ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপীয় রেনেসাঁসের সময় আধুনিক বিজ্ঞানের বিপুল বিস্তার ঘটে। এরপর গত পাঁচ শতাব্দী ধরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির মাধ্যমে মানবসভ্যতা অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে চিকিৎসা, যোগাযোগ, প্রযুক্তি, মহাকাশ গবেষণাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষের জীবনযাত্রা বদলে গেছে। বিজ্ঞানের সঙ্গে আজকের মানুষের জীবনের এক নিগূঢ় সম্পর্ক আছে বলেই  দুনিয়ার সকল দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজ্ঞান একটি অতি আবশ্যকীয় অঙ্গ,
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, একসময় যে মুসলিম সমাজ বিজ্ঞানচর্চায় অগ্রগামী ছিল, বর্তমানে সেই সমাজ বিজ্ঞানের মূলধারার অগ্রযাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এক দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মুসলিম সমাজের বিজ্ঞানের সাথে ওঠা বসা না থাকার কারণে এর চাবি কেড়ে নিয়েছে প্রাশ্চান্ত অনুসারীরা । ফলস্বরূপ : ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ, বিবর্তনবাদ সহ আরও  নানা ধরণের অনৈসলামিক ও বিকৃতিমূলক থিওরি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে আমাদের দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ।
 
ইসলাম ও বিজ্ঞান: দ্বন্দ্ব না সামঞ্জস্য?
 
নাস্তিক্যবাদী কিছু লোক দাবি করে যে মানব আবিষ্কৃত মাপকাঠিতে যা দৃশ্যত তা-ই সত্য। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র নামক তত্ত্বের প্রচারের সময় যখন গোটা জাতি দিশেহারা, তখন এই প্রশ্নটি আরও ব্যাপকভাবে ঘুরে ফিরে আসে। তখন অনেকেই বলতে থাকে—কুরআন অবৈজ্ঞানিক, অবাস্তব, সেকেলে একটি গ্রন্থ।
 
মজার বিষয় হলো:
তখন থেকেই ঈমানের বলে বলীয়ান কিছু মুমিন নাস্তিকদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য আল কুরআনের সঙ্গে বিজ্ঞানের মিল-অমিল খুঁজতে লাগল। সময় যত গড়িয়েছে, বিজ্ঞান ততই অগ্রসর হয়েছে। আর আশ্চর্যের বিষয় হলো, বিজ্ঞান যতই তার পাখা মেলতে থাকে, আল কুরআন ততই তার সত্যতা ও বিশুদ্ধতা দিয়ে বিজ্ঞানীদের চমকাতে থাকে।
আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, বহু বৈজ্ঞানিক সত্য কুরআনে ১৪০০ বছর আগেই উল্লেখ ছিল। বিজ্ঞান যতই এগোয়, কুরআনের সত্যতা ততই সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
কুরআনে বহু আয়াতে প্রকৃতি ও মহাবিশ্ব নিয়ে চিন্তা-গবেষণার আহ্বান জানানো হয়েছে—
 
"তারা কি উঁকি দিয়ে দেখে না আকাশ ও পৃথিবীর সাম্রাজ্যে এবং আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন..."
(সূরা আল-আরাফ: ১৮৫)

মহাশূন্যের গহীনে, তারার রহস্যময় জগতে স্বাগতম ! 

শেষ কথা:
 
বিজ্ঞান আজ প্রতিটি মানুষের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানকে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি মানবজাতির কল্যাণে আসতে পারে, আবার ভুলভাবে ব্যবহার করলে বিভ্রান্তির কারণও হতে পারে। তাই মুসলিম সমাজের উচিত ইসলামের আলোকে বিজ্ঞানচর্চা করা এবং প্রকৃত জ্ঞানের মাধ্যমে সভ্যতায় নতুন অবদান রাখা।
আজকের বিশ্বে মুসলিম তরুণদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আরও অগ্রসর হতে হবে, যাতে আমরা আবারও জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণায় নেতৃত্ব দিতে পারি, ইনশাআল্লাহ।


Ofde islam
আল হামিম হোসেন
Guest Writer - ঢাকা


Post a Comment

0Comments

Thanks everyday

Post a Comment (0)
To Top