নক্ষত্রপুঞ্জ চেনার সহজ উপায় এবং মৌসুম অনুযায়ী তাদের অবস্থান!
1️⃣ নক্ষত্রপুঞ্জের পরিচিতি
নক্ষত্রপুঞ্জ (Constellations) হল আকাশে ছড়িয়ে থাকা এক বা একাধিক উজ্জ্বল তারার গুচ্ছ, যা একসাথে একটি নির্দিষ্ট রূপ তৈরি করে। এই রূপগুলি সাধারণত কোনো প্রাণী, বস্তু বা চিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে এবং সেগুলির মধ্যে অনেক প্রাচীন ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক ধারণা জড়িয়ে থাকে।
2️⃣ নক্ষত্রপুঞ্জ চেনার সহজ উপায়
নক্ষত্রপুঞ্জ চেনার জন্য কিছু সহজ পদ্ধতি আছে। আমরা যদি কিছু বিশেষ কৌশল অনুসরণ করি, তবে এসব নক্ষত্রপুঞ্জকে চিনতে অনেক সহজ হবে।
১. উজ্জ্বল তারাগুলির সাহায্য নেওয়া:
প্রতিটি নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে কিছু উজ্জ্বল তারা থাকে, যা সহজে চেনা যায়। এগুলি আমাদের সাহায্য করে পুরো নক্ষত্রপুঞ্জ চেনার জন্য। উদাহরণস্বরূপ, ওরিয়ন নক্ষত্রপুঞ্জে তিনটি উজ্জ্বল তারা রয়েছে, যেগুলি এক সোজা রেখায় সাজানো থাকে, এই রেখাটি ওরিয়নের বেল্ট নামে পরিচিত।
![]() |
ওরিয়নের বেল্ট এবং তার আশেপাশের তারা (ছবি-১) |
২. রূপের সহজতা:
কিছু নক্ষত্রপুঞ্জে তারাগুলি একসাথে একটি বিশেষ আকৃতি তৈরি করে। যেমন লিও নক্ষত্রপুঞ্জ (Leo Constellation) সিংহের আকার তৈরি করে। এর মধ্যে একটি উজ্জ্বল তারা রেগুলাস রয়েছে, যা সিংহের মাথার অংশ হিসাবে দেখা যায়।
৩. আশেপাশের তারাগুলির অবস্থান:
অনেক নক্ষত্রপুঞ্জের চারপাশে ছোট আরও কিছু তারা থাকে, যা তাদের চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, পেগাসাস নক্ষত্রপুঞ্জটি (Pegasus Constellation) চারটি উজ্জ্বল তারার সাহায্যে একটি বর্গক্ষেত্রের আকার তৈরি করে।
3️⃣ মৌসুম অনুযায়ী নক্ষত্রপুঞ্জ এবং তাদের অবস্থান
(এ পর্বে আমরা প্রত্যেক মৌসুমের দুটি নক্ষত্রপুঞ্জ সম্পর্কে জানবো
পরবর্তী পর্বগুলোতে ধাপে ধাপে বাকিগুলো সম্পর্কে জানবো)
নক্ষত্রপুঞ্জের অবস্থান মৌসুম অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ, কোন মৌসুমে কোন নক্ষত্রপুঞ্জ আকাশে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান থাকে এবং সেগুলি কিভাবে চিনতে হবে, তা নিয়ে এখানে আলোচনা করব।
শীতকাল (ডিসেম্বর - ফেব্রুয়ারি)
শীতকালে আকাশ পরিষ্কার থাকে এবং এই সময় আমরা কিছু বিশেষ নক্ষত্রপুঞ্জ আরো স্পষ্টভাবে (constellations) দেখতে পারি। উত্তর গোলার্ধের জন্য কিছু প্রধান নক্ষত্রপুঞ্জ হলো:
১. ওরায়ন (Orion)
২. তাউরাস (Taurus - বৃষ রাশি)
৩. ক্যানিস মেজর (Canis Major - বৃহৎ কুকুর)
৪. ক্যানিস মাইনর (Canis Minor - ক্ষুদ্র কুকুর)
৫. জেমিনি (Gemini - মিথুন রাশি)
৬. অরিগা (Auriga - রথ)
1. ওরিয়ন (Orion) নক্ষত্রপুঞ্জ
ওরিয়ন (Orion) নক্ষত্রপুঞ্জ হলো আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল ও সহজে চেনার মতো নক্ষত্রপুঞ্জগুলোর একটি। শীতকালে এটি বিশেষভাবে দৃশ্যমান হয় এবং বহু সংস্কৃতিতে একে মহাকাশের "শিকারি" হিসেবে কল্পনা করা হয়।
ল্যাটিন নাম: Orion
অর্থ: শিকারি (Hunter)
প্রধান/উজ্জ্বল তারা: রিগেল (Rigel), বিটেলগিউজ (Betelgeuse), বেলাট্রিক্স (Bellatrix)
প্রধান আকর্ষণ: Betelgeuse.Rigel.Bellatrix.Saiph.Orion Nebula, M42
বেতেলগেস (Betelgeuse): ওরিয়নের ডান কাঁধে থাকা একটি লাল অতিদানব নক্ষত্র।
রাইজেল (Rigel): বাঁ পায়ের কাছে অবস্থিত নীল অতিদানব নক্ষত্র।
বেলাট্রিক্স (Bellatrix): ওরিয়নের বাঁ কাঁধের উজ্জ্বল নক্ষত্র।
সাইফ (Saiph): ওরিয়নের ডান পায়ের নক্ষত্র।
ওরিয়নের তলোয়ার: ওরিয়নের বল্টের নিচে ঝুলে থাকা তিনটি নক্ষত্র, যার মধ্যে একটির স্থানে রয়েছে বিখ্যাত ওরিয়ন নীহারিকা (Orion Nebula, M42)।
ওরিয়ন নীহারিকা (M42) : ওরিয়ন নীহারিকা এই নক্ষত্রপুঞ্জের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ, যা দূরবীন ছাড়াই দেখা যায়। এটি একটি তারকা জন্ম ক্ষেত্র (Star-forming region) যেখানে নতুন তারকারা গঠিত হচ্ছে।
আকাশে অবস্থান: বিষুবীয় অঞ্চলে (Celestial Equator)
আকৃতি ও চিহ্নিতকরণ:
ওরিয়ন নক্ষত্রপুঞ্জের আকৃতি একটি শিকারির মতো, যার কোমরে একটি বেল্ট, হাতে অস্ত্র এবং পায়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র রয়েছে।
দৃষ্টিগোচরতা: শীতকালে (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি): সন্ধ্যার পর স্পষ্ট দেখা যায়।
বাংলাদেশ থেকে:
সন্ধ্যার পর পূর্ব আকাশে উদিত হয়।
মধ্যরাতে দক্ষিণ আকাশে সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়।
বিশ্বের অন্যান্য স্থান থেকে:
উত্তর গোলার্ধ: দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে।
দক্ষিণ গোলার্ধ: উত্তর-পশ্চিম আকাশে।
পুরাণ ও সংস্কৃতিতে ওরিয়ন:
গ্রিক পুরাণ: ওরিয়ন ছিল এক মহান শিকারি, যাকে দেবী আর্নেমিস (Artemis) ও স্করপিয়ন (Scorpius) হত্যা করেছিল।
আরবীয় সংস্কৃতি: একে "মির্জাম" বলা হয়।
বাংলাদেশ ও ভারতীয় উপমহাদেশ: তিনটি বল্ট নক্ষত্রকে কখনো কখনো "শিকারির তীর" বা "তিন ভাই" বলা হয়।
চেনার উপায়: তিনটি উজ্জ্বল তারা এক সরলরেখায় সাজানো থাকে। এই তিনটি তারা ওরিয়নের বেল্ট তৈরি করে।
এটি শীতকালীন আকাশের সবচেয়ে সুন্দর ও চেনার মতো নক্ষত্রপুঞ্জ।
✔ "তিন তারা এক সরলরেখায়" → ওরিয়নের বল্ট (Orion’s Belt) হলো তিনটি উজ্জ্বল নক্ষত্র—আলনিতাক, আলনিলাম, মিনতাকা—যা এক সরলরেখায় অবস্থান করে।
✔ বল্টের ওপর-বাঁ দিকে লাল নক্ষত্র → বেতেলগেস (Betelgeuse) → ওরিয়নের ডান কাঁধে অবস্থিত লালচে উজ্জ্বল নক্ষত্র।
✔ বল্টের নিচে বাঁ দিকে নীল নক্ষত্র → রাইজেল (Rigel) → ওরিয়নের বাঁ পায়ে অবস্থিত নীল উজ্জ্বল নক্ষত্র।
✔ বল্টের নিচে ঝুলন্ত "তলোয়ার" → এখানে ওরিয়ন নীহারিকা (M42) অবস্থিত, যা ধোঁয়াটে দেখায়।
✔ সন্ধ্যার পর দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে দেখো → শীতকালে সন্ধ্যার পর পূর্ব-দক্ষিণ আকাশে খুঁজলে সহজেই পাওয়া যাবে।
📌 মনে রাখার কৌশল →
🔹 "তিন তারা সরলরেখায় + ওপর লাল + নিচে নীল"
🔹 বেল্ট + কাঁধে বেতেলগেস + পায়ে রাইজেল
![]() |
ওরিয়ন এবং বেল্টের সংস্থান বুঝার চেষ্টা করো |
ওরিয়ন নক্ষত্রপুঞ্জ আকাশে খালি চোখেই সহজে দেখা যায় এবং এর উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলো একে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে। যারা আকাশ পর্যবেক্ষণ ভালোবাসে, তাদের জন্য এটি অন্যতম প্রথম শিখতে ও চেনার মতো নক্ষত্রপুঞ্জ।
এখন তুমি রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে ওরিয়নকে খুঁজে বের করো!
2. ক্যানিস মেজর (Canis Major) নক্ষত্রপুঞ্জ
Canis Major (ক্যানিস মেজর) হলো আকাশের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রপুঞ্জ, যার অর্থ "মহান কুকুর" (Greater Dog)। এটি Orion নক্ষত্রপুঞ্জের পাশে অবস্থিত এবং গ্রিক পুরাণ অনুসারে এটি শিকারি ওরিয়নের বিশ্বস্ত শিকার কুকুর। এর সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র Sirius (সিরিয়াস) হলো আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা।
ল্যাটিন নাম: Canis Major
অর্থ: মহান কুকুর (Greater Dog)
প্রধান/উজ্জ্বল তারা: সাইরিয়াস (Sirius) , এটি সূর্যের ২৫ গুণ বেশি উজ্জ্বল এবং পৃথিবী থেকে মাত্র ৮.৬ আলোকবর্ষ দূরে। সিরিয়াস আসলে একটি যুগল নক্ষত্র (Binary Star System), যেখানে একটি বড় নক্ষত্র এবং তার চারপাশে একটি ছোট নক্ষত্র (Sirius B) ঘুরছে। Sirius এটি Orion’s Belt-এর নিচে একদম সরলরেখায় অবস্থিত (লক্ষ্য করো ছবি-১)।
প্রধান আকর্ষণ: Adhara.Wezen.Murzim.Aludra
Adhara (আধারা): কুকুরের পিছনের পায়ের কাছে অবস্থিত উজ্জ্বল নক্ষত্র।
Wezen (ওয়েজেন): কুকুরের পেটের অংশে অবস্থিত নক্ষত্র।
Murzim (মুরজিম): কুকুরের মাথার পাশে অবস্থিত নক্ষত্র।
Aludra (আলুদ্রা): কুকুরের লেজের দিকে অবস্থিত নক্ষত্র।
আকাশে অবস্থান:দক্ষিণ গোলার্ধের নক্ষত্রপুঞ্জ
আকৃতি ও চিহ্নিতকরণ:
Canis Major-এর আকৃতি একটি কুকুরের মতো কল্পনা করা হয়, যেখানে এর বিভিন্ন নক্ষত্র কুকুরের মাথা, শরীর, লেজ ও পা তৈরি করে।
দৃষ্টিগোচরতা: শীতকালে (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি): সন্ধ্যার পর দক্ষিণ আকাশে সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়।
বাংলাদেশ থেকে: সন্ধ্যার পর দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে Orion-এর কাছাকাছি দেখা যায়।
Orion-এর বল্ট-এর তিনটি নক্ষত্রের নিচে তাকালেই Sirius দেখতে পাওয়া যায়।
বিশ্বের অন্যান্য স্থান থেকে:
উত্তর গোলার্ধ: Orion-এর নিচের দিকে দেখা যায়।
দক্ষিণ গোলার্ধ: আকাশের উচ্চভাগে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।
পুরাণ ও সংস্কৃতিতে Canis Major
গ্রিক পুরাণ: ওরিয়নের বিশ্বস্ত শিকার কুকুর, যা আকাশে তাকে অনুসরণ করছে।
মিশরীয় সভ্যতা: সিরিয়াসের উদয়কে নীল নদের বার্ষিক বন্যার পূর্বাভাস হিসেবে গণ্য করা হতো।
আরবীয় সংস্কৃতি: সিরিয়াসকে "আল-শিয়ারা" নামে ডাকা হতো।
চেনার উপায়: এটি ওরিয়নের পাশে থাকে। ওরিয়নের বেল্টের তিনটি তারা অনুসরণ করলে সাইরিয়াস দেখা যাবে (লক্ষ্য করো ছবি-১)। এটি আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা।
✔ "Orion's Belt-এর নিচে তাকাও" → Orion-এর তিনটি বল্ট নক্ষত্র থেকে সরলরেখা টানলেই সিরিয়াস (Sirius) দেখতে পাবে (লক্ষ্য করো ছবি-১)।
✔ "সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র খুঁজো" → রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকাই হলো Sirius, এটি সহজেই চোখে পড়বে।
✔ "কুকুরের আকার খুঁজে নাও" → সিরিয়াসকে কুকুরের মাথা ধরে বাকি উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলো মিলে কুকুরের আকৃতি তৈরি করে।
📌 মনে রাখার কৌশল →
🔹 "Orion-এর নিচে উজ্জ্বলতম তারকা = Sirius"
🔹 "Sirius = আকাশের কুকুরের চোখ"
Canis Major হলো আকাশের অন্যতম সুন্দর নক্ষত্রপুঞ্জ, যেখানে Sirius-এর উজ্জ্বল আলো একে সহজেই চেনার সুযোগ দেয়। যারা মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ভালোবাসে, তাদের জন্য এটি অন্যতম প্রথম চেনার মতো নক্ষত্রপুঞ্জ।
এখন রাতের আকাশে Orion খুঁজে বের করো, তারপর Orion-এর নিচে তাকিয়ে Sirius ও Canis Major খুঁজে বের করো!
সবচেয়ে আলোচিত শীতকালীন নক্ষত্রগুলো:
✅ সিরিয়াস (Sirius) – রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র।
✅ বেতেলগুসে (Betelgeuse) – এটি একটি লাল সুপারজায়ান্ট নক্ষত্র, যা যেকোনো সময় সুপারনোভা হতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কেন্দ্র।
✅ রিগেল (Rigel) – এটি ওরায়নের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং বিশাল নীল-সাদা সুপারজায়ান্ট।
✅ অ্যালডেবারান (Aldebaran) – এটি তাউরাস নক্ষত্রপুঞ্জের লাল দৈত্য নক্ষত্র।
✅ কাপেলা (Capella) – এটি অরিগা নক্ষত্রপুঞ্জের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র।
বিশেষ আকর্ষণ: ‘Winter Hexagon’
উপরে বলা ছয়টি উজ্জ্বল নক্ষত্র মিলে শীতকালের আকাশে Winter Hexagon নামে পরিচিত একটি ছয়কোণা আকৃতি তৈরি করে, যা মহাকাশপ্রেমীদের জন্য দারুণ একটি দৃশ্য।
![]() |
Winter Hexagon (ছবি-৬) |
সর্বশেষ:
আকাশের দিকে তাকিয়ে ওরিয়ন, সিরিয়াস, তাউরাস ও প্লেইয়াডিস দেখে শুরু করলে শীতকালীন নক্ষত্রপুঞ্জ সহজেই চেনা যাবে!
বসন্তকাল (মার্চ - মে)
বসন্তকালে নতুন নক্ষত্রপুঞ্জ আকাশে উঠে আসে। এই সময় দেখা যায়:
1. লিও (Leo) নক্ষত্রপুঞ্জ
Leo (লিও) হলো রাত্রিকালীন আকাশের সবচেয়ে পরিচিত নক্ষত্রপুঞ্জগুলোর একটি, যার নামকরণ করা হয়েছে "সিংহ" নামে। এটি বসন্তকালে সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায় এবং এর আকৃতি অনেকটা একটি শোয়া সিংহের মতো মনে হয়।
ল্যাটিন নাম: Leo
অর্থ: সিংহ
প্রধান/উজ্জ্বল তারা: রেগুলাস (Regulus) Leo-এর বুকের অংশ
আকাশে অবস্থান: বিষুবরেখার কাছাকাছি, বসন্তকালে স্পষ্টভাবে দেখা যায়
রাশিচক্র: এটি ১২টি রাশিচক্র নক্ষত্রপুঞ্জের একটি, যা সূর্যের পথ (ecliptic) বরাবর অবস্থিত
আকৃতি ও চিহ্নিতকরণ:
Leo নক্ষত্রপুঞ্জের আকৃতি অনেকটা একটি শোয়া সিংহের মতো দেখা যায়।
এটি দুইটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত:
1. The Sickle (দাঁড়ি আকৃতির অংশ) → সিংহের মাথা ও কাঁধ
2. Triangular Body (ত্রিভুজাকৃতির অংশ) → সিংহের পিছনের অংশ ও লেজ
দৃষ্টিগোচরতা: বসন্তকালে (ফেব্রুয়ারি-মে): সন্ধ্যার পর পূর্ব দিগন্তে Leo দেখা যেতে শুরু করে
বাংলাদেশ থেকে: মার্চ-এপ্রিল মাসে রাত ৯টার পর আকাশের উত্তর-পূর্ব কোণে সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়
Regulus খুঁজে নাও, তারপর বাকিটা সহজে বোঝা যাবে
বিশ্বের অন্যান্য স্থান থেকে:
উত্তর গোলার্ধ: বসন্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নক্ষত্রপুঞ্জ
দক্ষিণ গোলার্ধ: গ্রীষ্মের সময়ে রাতের আকাশে দেখা যায়
চেনার উপায়: সাতটি উজ্জ্বল তারা সিংহের আকার তৈরি করে। রেগুলাস হল লিওর বুকের অংশ, যা খুব সহজে চেনা যায়।
![]() |
Leo হলো বসন্তের রাতের আকাশের অন্যতম সুন্দর নক্ষত্রপুঞ্জ, যা Regulus-এর উজ্জ্বল আলো এবং উল্টানো প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো আকৃতির জন্য সহজেই চেনা যায়। যারা মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ভালোবাসে, তাদের জন্য এটি চেনার অন্যতম সহজ নক্ষত্রপুঞ্জ।
এখন রাতের আকাশে উত্তর-পূর্ব দিকে তাকিয়ে Regulus খুঁজো, তারপর পুরো সিংহের আকৃতি বের করো!
2. ভার্গো (Virgo) নক্ষত্রপুঞ্জ
Virgo (ভার্গো) হলো আকাশের বৃহত্তম নক্ষত্রপুঞ্জগুলোর মধ্যে একটি এবং রাশিচক্রের (Zodiac) ১২টি নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বড়। এই নক্ষত্রপুঞ্জের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র Spica (স্পাইকা), যা আকাশে একটি উজ্জ্বল নীল-সাদা নক্ষত্র হিসেবে দেখা যায়।
Virgo সাধারণত একটি শুয়ে থাকা নারী রূপে কল্পনা করা হয়, যার হাতে গমের শীষ ধরা আছে। প্রাচীনকালে এই নক্ষত্রপুঞ্জকে শস্যদেবী (Harvest Goddess) বা উর্বরতার প্রতীক মনে করা হতো।
ল্যাটিন নাম: Virgo
অর্থ: কুমারী বা কন্যা
প্রধান/উজ্জ্বল তারা: স্পাইকা (Spica) এটি প্রায় ২৬০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত,
এটি সূর্যের তুলনায় ১২ গুণ বেশি বিশাল এবং ২০,০০০ গুণ বেশি উজ্জ্বল,
এই নক্ষত্রের কারণে Virgo সহজে চেনা যায়।
আকাশে অবস্থান: রাশিচক্রের মধ্যে
আকৃতি ও চিহ্নিতকরণ:
Virgo-এর আকৃতি কিছুটা একটি শোয়া নারীর মতো, যিনি Spica নামক নক্ষত্রটি হাতে ধরে আছেন।
দৃষ্টিগোচরতা: বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে (মার্চ-আগস্ট): রাতের আকাশে উত্তর-পূর্ব কোণে দেখা যায়
বাংলাদেশ থেকে: এপ্রিল-মে মাসে রাত ৯টার পর দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে দেখা যায়,
Leo-এর পাশে সহজেই এটি খুঁজে পাওয়া যায়
বিশ্বের অন্যান্য স্থান থেকে:
উত্তর গোলার্ধ: বসন্তের শেষ থেকে গ্রীষ্মের শুরু পর্যন্ত দেখা যায়
দক্ষিণ গোলার্ধ: শীতকালে রাতের আকাশে দৃশ্যমান
পুরাণ ও সংস্কৃতিতে Virgo
গ্রিক পুরাণ: Virgo নক্ষত্রপুঞ্জকে Demeter বা Persephone দেবীর সঙ্গে সম্পর্কিত করা হয়, যিনি উর্বরতার দেবী
রোমান সভ্যতা: তারা এই নক্ষত্রপুঞ্জকে Ceres (শস্যদেবী)-এর প্রতীক মনে করত
চেনার উপায়: ভার্গোতে একটি উজ্জ্বল তারা রয়েছে Spica, যা দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে দেখা যায়।
✔ "Spica খুঁজো" → আকাশে একটি উজ্জ্বল নীল-সাদা তারা দেখো, সেটাই Spica।
✔ "Big Dipper থেকে Spica" → Big Dipper-এর হাতল ধরে Arcturus খুঁজো, তারপর সেখান থেকে নিচে নেমে Spica খুঁজে পাবে। (এটি "Arc to Arcturus, Spike to Spica" নামে পরিচিত)
✔ "Leo-এর পাশে" → Leo নক্ষত্রপুঞ্জ খুঁজে নাও, তারপর তার ডান দিকে Virgo দেখতে পাবে।
📌 মনে রাখার কৌশল →
🔹 "Arc to Arcturus, Spike to Spica"
🔹 "Spica = Virgo-এর গমের শীষ"
![]() |
ভার্গো নক্ষত্রপুঞ্জ (ছবি-৮) |
Virgo হলো বসন্ত এবং গ্রীষ্মের রাতের আকাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নক্ষত্রপুঞ্জ, যা Spica-এর উজ্জ্বল আলো এবং তার পাশের Leo নক্ষত্রপুঞ্জের জন্য সহজেই চেনা যায়।
এখন রাতের আকাশে Leo খুঁজো, তারপর দক্ষিণ-পূর্ব দিকে তাকিয়ে Spica খুঁজে বের করো, তাহলেই Virgo সহজে চিনতে পারবে!
গ্রীষ্মকাল (জুন - আগস্ট)
গ্রীষ্মকালে আকাশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নক্ষত্রপুঞ্জ দেখা যায়:
1. লাইরা (Lyra) নক্ষত্রপুঞ্জ
Lyra (লাইরা) হলো একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নক্ষত্রপুঞ্জ, যা মূলত তার উজ্জ্বলতম নক্ষত্র Vega (ভেগা)-এর জন্য পরিচিত। এটি উত্তর গোলার্ধের গ্রীষ্মকালীন রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রপুঞ্জগুলোর মধ্যে একটি। Lyra-এর আকার অনেকটা সংগীতের প্রাচীন গ্রিক বীণার (Lyre) মতো, যা এর নামের মূল কারণ।
Lyra-এর উজ্জ্বল নক্ষত্র Vega হলো গ্রীষ্মের রাতের অন্যতম প্রধান নক্ষত্র, যা "Summer Triangle" নামে পরিচিত তিনটি নক্ষত্রের একটি।
ল্যাটিন নাম: Lyra
অর্থ: বীণা (Lyre)
প্রধান/উজ্জ্বল তারা: ভেগা (Vega) পৃথিবী থেকে পঞ্চম উজ্জ্বলতম নক্ষত্র,
এটি প্রায় ২৫ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত, প্রাচীনকালে Vega-কে "স্বর্গের প্রধান নক্ষত্র" বলা হতো
আকাশে অবস্থান: গ্রীষ্মকালে উত্তর গোলার্ধে দৃশ্যমান
প্রধান আকর্ষণ: Vega, Double Double ( 4Lyra), এবং M57 (Ring Nebula)
4Lyra (ডাবল ডাবল): এটি দুটি জোড়া নক্ষত্রের (Quadruple Star System) সমষ্টি
খালি চোখে একটি নক্ষত্র মনে হলেও টেলিস্কোপে দেখলে চারটি আলাদা নক্ষত্র দেখা যায়
M57 (Ring Nebula): এটি Lyra-এর সবচেয়ে জনপ্রিয় নীহারিকা
দেখতে অনেকটা একটি ধোঁয়াটে আংটির মতো
আকৃতি ও চিহ্নিতকরণ:
Lyra নক্ষত্রপুঞ্জের আকৃতি একটি ছোট আয়তক্ষেত্র বা একটি বীণার মতো। এর কেন্দ্রবিন্দু Vega, যা খুবই উজ্জ্বল এবং সহজে চেনা যায়।
দৃষ্টিগোচরতা: গ্রীষ্মকালে (মে-সেপ্টেম্বর): উত্তর গোলার্ধের রাতের আকাশে দেখা যায়
বাংলাদেশ থেকে: জুন-আগস্ট মাসে মধ্যরাতের দিকে ঠিক মাথার ওপরে (Zenith)-এ থাকে
Vega-এর জন্য সহজেই Lyra চেনা যায়
বিশ্বের অন্যান্য স্থান থেকে:
উত্তর গোলার্ধ: বসন্তের শেষ থেকে শরতের শুরু পর্যন্ত দৃশ্যমান
দক্ষিণ গোলার্ধ: নিরক্ষীয় অঞ্চলের কাছাকাছি অঞ্চল থেকে দেখা যায়
পুরাণ ও সংস্কৃতিতে Lyra:
গ্রিক পুরাণ: Lyra হলো Orpheus-এর বীণা, যাকে দেবতা Hermes তৈরি করেছিলেন এবং Zeus পরে আকাশে স্থান দিয়েছিলেন
চীনা পুরাণ: Vega-কে "Weaving Girl" (织女, Zhī Nǚ) বলা হয়, যে তার প্রেমিক Altair-এর (Aquila নক্ষত্রপুঞ্জ) থেকে আলাদা হয়ে রয়েছে
এই কাহিনী চীনের Qixi Festival (Tanabata) বা "ভালোবাসার উৎসব"-এর সঙ্গে সম্পর্কিত
চেনার উপায়: ভেগা হল সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা এবং এটি আকাশের মধ্যে একটি ছোট ত্রিভুজের মতো দেখা যায়।
✔ "Vega খুঁজো" → আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল নীল-সাদা তারা দেখো, সেটাই Vega।
✔ "Summer Triangle পদ্ধতি" → Deneb, Altair, এবং Vega—এই তিনটি উজ্জ্বল নক্ষত্র একসঙ্গে Summer Triangle তৈরি করে। এর মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বলটি হলো Vega।
✔ "Vega-এর পাশে ছোট আয়তক্ষেত্র" → Vega-এর আশপাশে চারটি মাঝারি উজ্জ্বল নক্ষত্রের একটি ছোট আয়তক্ষেত্র বা বীণা আকৃতি খুঁজো, তাহলেই Lyra পেয়ে যাবে।
📌 মনে রাখার কৌশল →
🔹 "Vega = Lyra-এর প্রধান তারা"
🔹 "Summer Triangle-এর সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাই Lyra-এর Vega"
![]() |
লাইরা নক্ষত্রপুঞ্জ এবং ভেগা (ছবি-৯) |
Lyra হলো একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নক্ষত্রপুঞ্জ, যা তার উজ্জ্বল নক্ষত্র Vega-এর জন্য বিখ্যাত। Vega খুঁজে পেলেই Lyra সহজে চেনা সম্ভব!
এখন রাতের আকাশে "Summer Triangle" খুঁজে দেখো, তারপর Vega-এর পাশে ছোট আয়তক্ষেত্র আকৃতির নক্ষত্রপুঞ্জ পেলে বুঝবে, তুমি Lyra-কে খুঁজে পেয়েছ!
2. অ্যাকুইলা (Aquila) নক্ষত্রপুঞ্জ
Aquila (আক্বিলা) হলো উত্তর গোলার্ধের একটি গ্রীষ্মকালীন নক্ষত্রপুঞ্জ, যা ঈগলের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। এটি গ্রীষ্মের রাতে আকাশে খুব সহজেই দেখা যায় এবং তার অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র Altair (অলটায়ার)-এর জন্য বিখ্যাত। Aquila নক্ষত্রপুঞ্জটি মূলত দক্ষিণ গোলার্ধের কাছে রয়েছে এবং এর ঈগল রূপটি আকাশে দৃশ্যমান।
ল্যাটিন নাম: Aquila
অর্থ: ঈগল
প্রধান/উজ্জ্বল তারা: অ্যাল্টাইর (Altair) পৃথিবী থেকে ১৬.৭ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত
এটি তিনটি প্রধান গ্রীষ্মকালীন নক্ষত্রের মধ্যে একটি (সম্ভবত Summer Triangle তে ভিড়ে)
Altair একটি দ্রুত ঘূর্ণায়মান নক্ষত্র, যার পরিভ্রমণ সময় মাত্র ১০ ঘণ্টা।
আকাশে অবস্থান: গ্রীষ্মকালে উত্তর গোলার্ধে দৃশ্যমান
প্রধান আকর্ষণ: Altair, Albireo, এবং Aql X-1 (অক্টোবরের ব্ল্যাক হোল)
Albireo (আলবিরিও): এটি একটি দ্বৈত নক্ষত্র সিস্টেম, যা খালি চোখে দুটি নক্ষত্র মনে হয়, কিন্তু টেলিস্কোপ দিয়ে দুটি আলাদা নক্ষত্র দেখা যায়
Aql X-1 (অ্যাকিউলা এক্স-১):
এটি একটি ব্ল্যাক হোল, যা Aquila নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত এবং ধনী রেডিও বিকিরণ দ্বারা দেখা যায়
আকৃতি ও চিহ্নিতকরণ:
Aquila নক্ষত্রপুঞ্জের আকৃতি অনেকটা ঈগলের মতো মনে হয়, যার লম্বা ডানা এবং সোজা লেজ। এটি Altair নামে পরিচিত একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র দিয়ে চিহ্নিত করা হয়, যা Aquila নক্ষত্রপুঞ্জের কেন্দ্রবিন্দু।
দৃষ্টিগোচরতা: গ্রীষ্মকালে (মে-সেপ্টেম্বর): উত্তর গোলার্ধে দৃশ্যমান
বাংলাদেশ থেকে: জুন-আগস্ট মাসে মধ্যরাতের দিকে, Aquila আকাশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দেখা যায়
Altair দেখলেই Aquila নক্ষত্রপুঞ্জ চেনা সম্ভব।
বিশ্বের অন্যান্য স্থান থেকে:
উত্তর গোলার্ধ: গ্রীষ্মকাল থেকে শরত্কালের শুরু পর্যন্ত
দক্ষিণ গোলার্ধ: Aquila পুরো বছর ধরেই দৃশ্যমান
পুরাণ ও সংস্কৃতিতে Aquila :
গ্রিক পুরাণ: Aquila হলো Zeus-এর ঈগল, যা প্রতিদিনই দেবতা Zeus-এর আদেশে আকাশে উড়ে চলে যেত
Zeus-এর ঈগল একসময় Ganymede (গ্যানে’মিড) নামক যুবককে অপহরণ করে স্বর্গে নিয়ে যায় 🙄।
চীনা পুরাণ: Aquila-কে "Xīngyuán" (星元) বলা হয়, যা চীনা আকাশে ঈগলের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
চেনার উপায়: ভেগার থেকে নিচে তাকালে এটি দেখা যাবে।
✔ "Markab খুঁজুন" → **Pegasus নক্ষত্রপুঞ্জের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রটি খুঁজে পেলেই, সেটা Markab হবে।
✔ "Square of Pegasus" পদ্ধতি → Pegasus নক্ষত্রপুঞ্জের চারটি প্রধান নক্ষত্রের মাধ্যমে একটি স্কয়ার আকৃতি তৈরি হয়।
✔ "আকাশের ঘোড়া" → Markab, Algenib, Alpheratz, এবং Scheat—এই চারটি নক্ষত্রের সমন্বয়ে Pegasus নক্ষত্রপুঞ্জের আকৃতি তৈরি হয়।
📌 মনে রাখার কৌশল →
🔹 "Markab = Pegasus-এর প্রধান তারা"
🔹 "Square of Pegasus = স্কয়ার আকৃতি, সহজে চেনা যায়!"
![]() |
অ্যাকুইলা নক্ষত্রপুঞ্জ (ছবি-১০)![]() |
Aquila হলো একটি শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী নক্ষত্রপুঞ্জ, যা আকাশে ঈগলের মতো দেহের নকশা ধারণ করে। Altair এর উজ্জ্বলতার কারণে Aquila খুব সহজেই চেনা যায়।
এখন রাতের আকাশে Altair খুঁজে দেখো এবং উপভোগ করো Aquila নক্ষত্রপুঞ্জের সৌন্দর্য!
শরৎকাল (সেপ্টেম্বর - নভেম্বর)
শরতের আকাশে কিছু নতুন নক্ষত্রপুঞ্জ দেখা যায়:
1. পেগাসাস (Pegasus) নক্ষত্রপুঞ্জ
Pegasus হলো উত্তর গোলার্ধের একটি বৃহৎ নক্ষত্রপুঞ্জ, যা গ্রীষ্মকালীন আকাশে দৃশ্যমান। এটি মিথোলজি থেকে আসা একটি কিংবদন্তী পশু, পেগাসাস (Pegasus) নামক অশ্ব-স্বপ্নচারী ঘোড়ার চিহ্ন হিসেবে পরিচিত। Pegasus নক্ষত্রপুঞ্জ মূলত বৃহৎ আকাশে একটি ঘোড়ার আকার ধারণ করে এবং এর সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র Markab।
ল্যাটিন নাম: Pegasus
অর্থ: আকাশের ঘোড়া
প্রধান/উজ্জ্বল তারা: মার্কাব (Markab) এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৩৩ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
আকাশে অবস্থান: উত্তরের গ্রীষ্মকালীন আকাশে
প্রধান আকর্ষণ: Markab, Algenib, Alpheratz, M15 (অতিপ্রাকৃতিক গ্যালাক্সি)
Algenib (আলজেনিব): এটি Markab-এর পাশে অবস্থিত, আর এটি একটি বৃহৎ নক্ষত্র সিস্টেম
Alpheratz (আলফেরাটস): এটি Pegasus এবং Andromeda নক্ষত্রপুঞ্জের সংযোগস্থলে অবস্থিত, এবং দ্বৈত নক্ষত্র সিস্টেম
M15 (এম-১৫): Pegasus নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত এক হাজারেরও বেশি নক্ষত্রের সমন্বয়ে গঠিত একটি গ্যালাক্সি ক্লাস্টার
আকৃতি ও চিহ্নিতকরণ: Pegasus নক্ষত্রপুঞ্জের আকৃতি অনেকটা একটি উড়ন্ত ঘোড়ার মতো দেখতে হয়। এটি প্রায় শতাব্দীকাল ধরে মিথোলজিক ঘোড়া পেগাসাসের সঙ্গে যুক্ত এবং এর নক্ষত্রগুলি আকাশে ঘোড়ার শরীর এবং ডানার চিহ্ন দেয়।
দৃষ্টিগোচরতা: গ্রীষ্মকালে (মে-সেপ্টেম্বর): উত্তর গোলার্ধে দৃশ্যমান
বাংলাদেশ থেকে: মধ্যরাত থেকে, গ্রীষ্মকালীন আকাশে Markab খুঁজে পেলেই, Pegasus চিহ্নিত করতে পারবেন
বিশ্বের অন্যান্য স্থান থেকে:
উত্তর গোলার্ধ: গ্রীষ্মকাল থেকে শরত্কালের শুরু পর্যন্ত
দক্ষিণ গোলার্ধ: Pegasus কখনোই দক্ষিণ গোলার্ধে দেখা যায় না।
পুরাণ ও সংস্কৃতিতে Pegasus:
গ্রিক পুরাণ: Pegasus হলো মিথোলজিক ঘোড়া, যার জন্ম **বৃহৎ দেবতা Zeus-এর আগুন থেকে হয়।
Pegasus-এর প্যারিস নামে একটি মিথোলজিক কিংবদন্তী রয়েছে, যেখানে ঘোড়া আকাশে উড়ে তার প্রশস্ত পাখাগুলি দ্বারা আকাশের নকশা তৈরি করে।
চীনা পুরাণ: Pegasus চীনা আকাশে, শক্তি ও আকাশের ঘোড়ার ধারণা তুলে ধরে।
চেনার উপায়: চারটি উজ্জ্বল তারা একটি বড় বর্গক্ষেত্র তৈরি করে।
✔ "Markab খুঁজুন" → **Pegasus নক্ষত্রপুঞ্জের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রটি খুঁজে পেলেই, সেটা Markab হবে।
✔ "Square of Pegasus" পদ্ধতি → Pegasus নক্ষত্রপুঞ্জের চারটি প্রধান নক্ষত্রের মাধ্যমে একটি স্কয়ার আকৃতি তৈরি হয়।
✔ "আকাশের ঘোড়া" → Markab, Algenib, Alpheratz, এবং Scheat—এই চারটি নক্ষত্রের সমন্বয়ে Pegasus নক্ষত্রপুঞ্জের আকৃতি তৈরি হয়।
📌 মনে রাখার কৌশল →
🔹 "Markab = Pegasus-এর প্রধান তারা"
🔹 "Square of Pegasus = স্কয়ার আকৃতি, সহজে চেনা যায়!"
পেগাসাস (Pegasus) নক্ষত্রপুঞ্জ (ছবি-১১) |
Pegasus হলো একটি বিশাল নক্ষত্রপুঞ্জ যা আকাশের একটি উড়ন্ত ঘোড়ার রূপে আবির্ভূত হয়। Markab এর উজ্জ্বলতার কারণে খুব সহজেই চেনা যায় এবং Pegasus-এ মিথোলজিক ঘোড়ার ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস রয়েছে।
এখন রাতের আকাশে Markab খুঁজে দেখুন এবং উপভোগ করুন Pegasus নক্ষত্রপুঞ্জের সৌন্দর্য!
2. পাইসিস অ্যাস্ট্রিনাস (Piscis Austrinus) নক্ষত্রপুঞ্জ
ল্যাটিন নাম: Piscis Austrinus
অর্থ: দক্ষিণের মাছ।
প্রধান/উজ্জ্বল তারা: ফর্মালহট (Fomalhaut) পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত
এটি মাছের মাথার অংশ হিসেবে আকাশে দেখায়।
আকাশে অবস্থান: দক্ষিণ গোলার্ধে।
প্রধান আকর্ষণ: Fomalhaut, Al Dhanab, Beta Piscis Austrini
Al Dhanab (আল ধানাব): Fomalhaut এর পাশে অবস্থিত, Piscis Austrinus নক্ষত্রপুঞ্জের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নক্ষত্র।
Beta Piscis Austrini (বিটা পিসিস অস্ট্রিনিরি): Piscis Austrinus এর তৃতীয় প্রধান নক্ষত্র।
আকৃতি ও চিহ্নিতকরণ: Piscis Austrinus নক্ষত্রপুঞ্জের আকৃতি একটি বৃহৎ মাছের মতো, যার সাঁতার কাটার রূপ আকাশের মাঝে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়। এটি একদিকে Fomalhaut নামক উজ্জ্বল নক্ষত্রের দ্বারা নির্দেশিত, যা মাছের মাথার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
দৃষ্টিগোচরতা: শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি): দক্ষিণ গোলার্ধে দৃশ্যমান
বাংলাদেশ থেকে: দক্ষিণ আকাশে রাত ১০টা বা তার পর থেকে দেখা যায়, Fomalhaut খুঁজে পেলেই, Piscis Austrinus চিহ্নিত করতে পারবেন
বিশ্বের অন্যান্য স্থান থেকে:
দক্ষিণ গোলার্ধ: শীতকাল থেকে গ্রীষ্মের শুরু পর্যন্ত।
উত্তর গোলার্ধ: দক্ষিণ দিকের নীচে থাকার কারণে মোটেও দেখা যায় না।
পুরাণ ও সংস্কৃতিতে Piscis Austrinus:
গ্রিক পুরাণ: Piscis Austrinus একটি মাছের পুরাণিক চিহ্ন, যা গ্রিক মিথোলজির মধ্যে ঈশ্বরদের উপহারের রূপে বিবেচিত, এই মাছের নামটি এমন একটি স্থানে রাখা হয়েছিল যেখানে পুরাণের মাছেরা তাদের অমরত্ব বজায় রাখত।
আরব পুরাণ: Piscis Austrinus-এর মাছের চিহ্ন ঐতিহ্যগত ভাবে সৌন্দর্য ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত হয়।
চেনার উপায়: ফর্মালহট হল সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা এবং এটি আকাশের দক্ষিণে দেখা যায়।
✔ "Fomalhaut খুঁজুন" → **Piscis Austrinus নক্ষত্রপুঞ্জের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রটি খুঁজে পেলেই, সেটা Fomalhaut হবে।
✔ "Mouth of the Fish" পদ্ধতি → Fomalhaut মাছের মাথার অংশ হিসেবে খুঁজে পেতে সাহায্য করবে, আর মাছের শরীরের বাকী অংশও সহজেই চিহ্নিত হবে।
✔ "উজ্জ্বল মাছ" → Fomalhaut ছাড়া, অন্য কোনো উজ্জ্বল নক্ষত্র এই নক্ষত্রপুঞ্জে নেই, তাই Fomalhaut কে খুঁজে পেলে, Piscis Austrinus সনাক্ত করা সহজ।
📌 মনে রাখার কৌশল →
🔹 "Fomalhaut = Piscis Austrinus এর প্রধান তারা"
🔹 "মাছের মাথা = Fomalhaut"
পাইসিস অ্যাস্ট্রিনাস নক্ষত্রপুঞ্জ (ছবি-১২) |
Piscis Austrinus একটি বৃহৎ মাছের নক্ষত্রপুঞ্জ যা Fomalhaut নামক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র দিয়ে চিহ্নিত হয়। এটি দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকালীন আকাশে দৃশ্যমান এবং এর Fomalhaut-কে মাছের মাথার অংশ হিসেবে সহজেই চেনা যায়। এখন Fomalhaut খুঁজে দেখুন এবং Piscis Austrinus নক্ষত্রপুঞ্জের অসীম সৌন্দর্য উপভোগ করুন!
শেষ কথা:
এই আলোচনা আমাদেরকে আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জ সহজে চিনতে সাহায্য করবে। আমরা ছবিগুলি দেখে খুব সহজেই বিভিন্ন নক্ষত্রপুঞ্জের অবস্থান, রূপ এবং উজ্জ্বল তারাগুলি চিনতে পারবো। আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা যখন এই নক্ষত্রপুঞ্জগুলিকে দেখবো, তখন বুঝে যাবো যে কোন নক্ষত্রপুঞ্জটি কোথায় অবস্থিত। ইনশা-আল্লাহ, আমরা এএর মাধ্যমে আকাশের সৌন্দর্য কিছুটা হলেও উপভোগ করতে পারবো।
Thanks everyday