মহাশূন্যে তারার মৃত্যু !
মহাশূন্যের গহীনে. পঞ্চম পর্বে আমরা তারার প্রধান অনুক্রম (Main Sequence) ধাপ সম্পর্কে জেনেছি ।তারা হলো মহাবিশ্বের উজ্জ্বল জ্বলন্ত গ্যাসের বিশাল বল, যা মূলত হাইড্রোজেন ও হেলিয়ামের মিশ্রণে তৈরি। তারা নিজের জ্বালানি (মূলত হাইড্রোজেন) দিয়ে আলো ও তাপ উৎপন্ন করে। কিন্তু যখন তাদের জ্বালানি (হাইড্রোজেন) শেষ হয়ে যায়, তখন বিভিন্ন আকারের তারার জন্য ভিন্ন ভিন্ন পরিণতি ঘটে। চলো আজকের ষষ্ঠ পর্বে আমরা তা সহজভাবে ধাপে ধাপে বুঝি !
ধাপ ১: তারার জ্বালানি (হাইড্রোজেন) কীভাবে শেষ হয়?
তারা মূলত হাইড্রোজেন গ্যাসকে ফিউশন (সংযোজন) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হেলিয়ামে পরিণত করে। এই ফিউশন প্রক্রিয়ায় প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয়, যা তারাকে আলোকিত ও উজ্জ্বল করে রাখে। কিন্তু আস্তে আস্তে তারার ভেতরের হাইড্রোজেন শেষ হয়ে যায়
ধাপ ২: জ্বালানি (হাইড্রোজেন) শেষ হওয়ার পর কী হয়?
তারার ভর বা আকারের ওপর নির্ভর করে জ্বালানি শেষ হওয়ার পর কী হবে। তারাদের সাধারণত তিনটি প্রধান ভাগ রয়েছে:
১. নিম্ন ভরের তারা (Low Mass Stars) - (সূর্যের ~০.১ থেকে ০.৫ গুণ ভর)
✔ জীবনকাল: কয়েকশ বিলিয়ন বছর (যেহেতু নিউক্লিয়ার ফিউশন ধীরগতিতে ঘটে)।
✔ শেষ পরিণতি:
প্রথমে এটি লাল দানব (Red Giant) হয়ে প্রসারিত হয়।
এরপর বাইরের স্তর ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে প্ল্যানেটারি নেবুলা (Planetary Nebula) তৈরি করে।
অবশিষ্ট কোর বা অংশ সাদা বামন (White Dwarf) হয়ে যায়।
অবশিষ্ট কোর বা অংশ সাদা বামন (White Dwarf) হয়ে যায়।
দীর্ঘ সময় পর এটি কালো বামন (Black Dwarf) হয়ে ঠান্ডা হয়ে যায়, যা কোনো আলো বা তাপ দেয় না (তবে এখনো কোনো কালো বামন মহাবিশ্বে গঠিত হয়নি, কারণ এর জন্য অনেক বেশি সময় লাগে)।
২. মধ্যম ভরের তারা (Intermediate Mass Stars) - (সূর্যের ~০.৫ থেকে ৮ গুণ ভর)
✔ জীবনকাল: কয়েকশ কোটি বছর (~১০ বিলিয়ন বছর, যেমন আমাদের সূর্য)।
✔ শেষ পরিণতি:
প্রথমে এটি লাল দানব (Red Giant) হয়ে যায়।
হিলিয়াম ও কার্বন ফিউশন কিছু সময় চলতে থাকে (নিম্ন ভরের তারার তুলনায় বেশি স্তর ফিউশন করতে পারে)।
শেষ পর্যন্ত বাইরের স্তর ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে প্ল্যানেটারি নেবুলা (Planetary Nebula) তৈরি করে।
অবশিষ্ট কোর সাদা বামন (White Dwarf) হয়ে যায়।
✅ এ শ্রেণির তারাগুলোর শেষ পরিণতি নিম্ন ভরের তারার মতোই, তবে এরা একটু বেশি সময় ধরে ফিউশন চালিয়ে যেতে পারে।
৩. উচ্চ ভরের তারা (High Mass Stars) - (সূর্যের ৮ গুণ বা তার বেশি ভর)
✔ জীবনকাল: কয়েক লাখ থেকে কয়েক কোটি বছর (ফিউশন দ্রুত হয়, তাই আয়ু কম)।
✔ শেষ পরিণতি:
হাইড্রোজেন শেষ হলে এটি আরো ভারী মৌল ফিউশন চালিয়ে আয়রন (Fe) পর্যন্ত গঠন করে।কিন্তু এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো: হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম বা অন্য মৌল তৈরি হলে শক্তি উৎপন্ন হয়। কিন্তু আয়রন ফিউশন করলে শক্তি শোষিত হয়, উৎপন্ন হয় না।
এরপর সুপারনোভা (Supernova) বিস্ফোরণ ঘটে, যা মহাকাশে বিশাল শক্তি ছড়িয়ে দেয়।
বিস্ফোরণের পর অবশিষ্ট কোরের ভরের ওপর নির্ভর করে দুই ধরনের ফলাফল হতে পারে:
১. যদি অবশিষ্ট কোরের ভর ~১.৪ থেকে ৩ গুণ সূর্যের ভর হয়: এটি নিউট্রন তারা (Neutron Star) হয়, যা অত্যন্ত ঘন এবং প্রায় সম্পূর্ণ নিউট্রন দিয়ে গঠিত।
অবশিষ্ট কোরের ভর ৩ গুণ সূর্যের চেয়ে বেশি হলে: এটি ব্ল্যাক হোলে (Black Hole) পরিণত হয়, যেখানে মাধ্যাকর্ষণ এত বেশি যে আলো পর্যন্ত বের হতে পারে না।
তারার জীবনচক্র: জন্ম থেকে মৃত্যু- ছবিতে খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে !
![]() |
তারার জীবনচক্র: জন্ম থেকে মৃত্যু |
(ইচ্ছে হলে কমেন্টে জানাতে পারো)
এই পর্বটি কেমন লাগলো? তুমি কি কোনো বিশেষ তারা সম্পর্কে জানতে চাও?
তাতে আমরা জানবো রাতের আকাশে কোন মৌসুমে কোন তারাগুলো ভালো দেখা যায়।
Thanks everyday