তারার জীবনচক্র: প্রধান অনুক্রম ধাপ !
মহাশূন্যের গহীনে_চতুর্থ_পর্বে আমরা জেনেছি 'নেবুলা' থেকে তারার জন্ম কিভাবে হয় তা সম্পর্কে, পঞ্চম পর্বে আজ আমরা আলোচনা করব একটি তারার অস্তিত্বে আসার পরবর্তী ধাপ যা জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী পর্যায়—প্রধান অনুক্রম ধাপ নিয়ে। এই ধাপে তারা স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে এবং কোটি কোটি বছর ধরে শক্তি উৎপন্ন করতে থাকে। চলুন জেনে নিই, কীভাবে এই ধাপে তারা আলো ছড়ায় এবং মহাবিশ্বকে প্রাণময় করে তোলে !
প্রধান অনুক্রম ধাপ কী?
প্রধান অনুক্রম ধাপ হল তারার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সময়, যেখানে তারা মূলত হাইড্রোজেন ফিউশন চালিয়ে শক্তি উৎপন্ন করে এবং দীর্ঘ সময় ধরে স্থিতিশীল থাকে।
এই পর্যায়ে তারার কেন্দ্রে হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম উৎপন্ন হয়, যা বিশাল পরিমাণে শক্তি ছড়ায়। শক্তির এই প্রবাহ তারার ভেতরের মহাকর্ষীয় আকর্ষণের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে, ফলে তারা স্থিতিশীল থাকে এবং একটানা আলো ছড়াতে পারে।
এ পর্যায়ে আমরা জানবো !
1️⃣ প্রধান অনুক্রম কীভাবে শুরু হয়,
2️⃣ কিভাবে তারা দীর্ঘ সময় ধরে জ্বলে,
3️⃣ এবং কখন ও কীভাবে তারা এই ধাপ থেকে বেরিয়ে যায়।
1️⃣ প্রধান অনুক্রম: তারার সবচেয়ে স্থিতিশীল পর্ব
একটি তারা জন্মানোর পর যখন এটি যথেষ্ট পরিমাণে সংকুচিত হয় এবং নিউক্লিয়ার ফিউশন শুরু হয়, তখনই সেটি প্রধান অনুক্রম তারায় পরিণত হয়।
নিউক্লিয়ার ফিউশন: শক্তির মূল উৎস
2️⃣ কিভাবে তারা দীর্ঘ সময় ধরে জ্বলে,
এই পর্যায়ে তারার কেন্দ্রে হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো একত্রিত হয়ে হিলিয়ামে রূপান্তরিত হয়।
এই ফিউশনের ফলে বিশাল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়, যা দুটি প্রধান কাজ করে:
1. তারাকে আলোকিত রাখে: ফিউশনের ফলে তাপ ও আলো উৎপন্ন হয়, যা তারাকে উজ্জ্বল করে তোলে।
2. মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে শক্তি দেয়: তারার নিজস্ব মহাকর্ষ একে সংকুচিত করতে চায়, কিন্তু ফিউশনের ফলে সৃষ্টি হওয়া আউটওয়ার্ড চাপ (Radiation Pressure) এই সংকোচনকে প্রতিহত করে। ফলে তারা সন্তুলিত (Equilibrium) অবস্থায় থাকে।
তারার প্রধান অনুক্রম ধাপের বৈশিষ্ট্য :
১. আয়ুষ্কাল:
প্রধান অনুক্রম ধাপে তারারা তাদের মোট জীবনের প্রায় ৮০-৯০% সময় কাটায়।
বিশাল তারারা দ্রুত হাইড্রোজেন ফুরিয়ে ফেলে, তাই এদের জীবনকাল কম।
ছোট তারারা ধীরে ধীরে হাইড্রোজেন ব্যবহার করে, ফলে এদের আয়ু দীর্ঘ হয়।
২. তাপমাত্রা ও উজ্জ্বলতা:
তারার ভরের উপর নির্ভর করে প্রধান অনুক্রম তারার রঙ, তাপমাত্রা ও উজ্জ্বলতা বিভিন্ন হয়:
(প্রধান অনুক্রম তারার ভর অনুযায়ী শ্রেণী নির্ধারণ)
বিশাল তারা (Massive Stars)
✔ রঙ: নীল
✔ তাপমাত্রা: ১০,০০০ K – ৫০,০০০ K
✔ আয়ুষ্কাল: কয়েক মিলিয়ন বছর
✔ শ্রেণী: O, B, A
🔹 এই তারাগুলো বিশাল ও উজ্জ্বল হয়, দ্রুত ফিউশন সম্পন্ন করে এবং তুলনামূলকভাবে স্বল্পায়ু হয়।
🔹 উদাহরণ: রিগেল (Rigel - শ্রেণী B), আলতাইর (Altair - শ্রেণী A)
মাঝারি তারা (Medium-mass Stars) (যেমন আমাদের সূর্য)
✔ রঙ: সাদা-হলুদ থেকে কমলা
✔ তাপমাত্রা: ৩,৫০০ K – ৭,৫০০ K
✔ আয়ুষ্কাল: কয়েক বিলিয়ন বছর
✔ শ্রেণী: F, G, K
🔹 এই তারাগুলো দীর্ঘ সময় ধরে ফিউশন চালিয়ে যেতে পারে এবং প্রধান অনুক্রম ধাপে বহু বিলিয়ন বছর ধরে স্থিতিশীল থাকে।
🔹 উদাহরণ: সূর্য (G শ্রেণী), আলডেবারান (K-শ্রেণী)
ছোট তারা (Low-mass Stars) (লাল বামন তারা)
✔ রঙ: লাল
✔ তাপমাত্রা: ২,৫০০ K – ৩,৫০০ K
✔ আয়ুষ্কাল: শত শত বিলিয়ন বছর
✔ শ্রেণী: M
🔹 ছোট ও কম তাপমাত্রার তারা, খুব ধীরে ফিউশন করে, তাই এদের আয়ুষ্কাল অনেক দীর্ঘ হয়।
🔹 উদাহরণ: প্রক্সিমা সেন্টরি (M5 শ্রেণী), ব্যার্নার্ড’স স্টার (M4 শ্রেণী)
নোট:
প্রধান অনুক্রম ধাপই তারার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়, যেখানে তারা স্থিতিশীলভাবে জ্বলতে থাকে এবং মহাবিশ্বের আলো ও শক্তির উৎস হয়ে ওঠে। এটি বুঝতে পারলে তারার জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে রহস্যময় অধ্যায়টি স্পষ্ট হয়ে যায়।
3️⃣ কখন প্রধান অনুক্রম থেকে বেরিয়ে যাবে?
একটি তারা প্রধান অনুক্রম ধাপে থাকে যতক্ষণ এর কেন্দ্রে হাইড্রোজেন ফিউশন চলতে থাকে। কিন্তু একসময় হাইড্রোজেন ফুরিয়ে যায়, তখন তারার ভরের উপর নির্ভর করে এর ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয় !
📖 পরবর্তী পর্ব: “মহাশূন্যে তারার মৃত্যু, নিউট্রন ও ব্ল্যাক হোল” মহাশূন্যের গহীনে.ষষ্ঠ পর্ব
তাতে আমরা জানবো তারার জ্বালানি (হাইড্রোজেন) শেষ হওয়ার পর কী হয়?
Thanks everyday