মহাশূন্যে তারার জীবনচক্র : নেবুলা থেকে তারার জন্ম,মহাশূন্যের গহীনে. ৪র্থ পর্ব

0

 তারার জীবনচক্র:নেবুলা থেকে তারার জন্ম

মহাশূন্যের গহীনে. তৃতীয় পর্বে  আমরা বিখ্যাত কিছু তারার সাথে পরিচিত হয়েছি সূর্য, সাইরিয়াস, বিটেলগিউজ, প্রক্সিমা সেন্টাউরি ইত্যাদি পরবর্তী পর্বগুলোতে আমরা এই বিখ্যাত তারাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো!
তারার জীবনচক্র: জন্ম থেকে মৃত্যু তারারা চিরকাল এক অবস্থায় থাকে না। প্রতিটি তারারও আছে একটি  জীবন, জন্ম, বিকাশ, পরিণতি এবং শেষ পর্ব। কিন্তু কীভাবে এক বিশাল নক্ষত্র ধ্বংস হয়ে যেতে পারে? অথবা কীভাবে একটি সাধারণ গ্যাসীয় মেঘ থেকে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের জন্ম হয়"মহাশূন্যের গহীনে" এর চতুর্থ পর্বে আজ আমরা এই রহস্যের দরজা একটু খুলে দেখবো, যেখানে লুকিয়ে আছে এক মহাজাগতিক বিস্ময়! পরবর্তী পর্বগুলোতে আমরা আরও গভীরে গিয়ে এই রহস্যের বিস্তারিত জানবোআজ আমরা ধাপে ধাপে বুঝবো, কীভাবে এই নেবুলা থেকে একটি নতুন তারার সৃষ্টি হয়।

---


1️⃣নেবুলা – তারার জন্মস্থল

তারার জন্ম হয় মহাকাশের বিশাল গ্যাস ধূলিকণার মেঘ থেকে, যা নেবুলা নামে পরিচিত। আরো সহজভাবে বললে, নেবুলা হলো মহাকাশে ভাসমান বিশাল গ্যাস ও ধুলার মেঘ। এটি দেখতে অনেকটা ধোঁয়ার মতো মনে হয়, কিন্তু আসলে এটি হাইড্রোজেন, হিলিয়াম এবং ধুলিকণা দিয়ে তৈরি। নেবুলা সাধারণত ঠান্ডা এবং ছড়ানো অবস্থায় থাকে, তাই এটি থেকে সহজে তারার জন্ম হয় না। কিন্তু যদি কোনো শক্তিশালী ঘটনা ঘটে, তাহলে নেবুলার কিছু অংশ সংকুচিত হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে ঘন হয়ে ওঠে।


2️⃣এই সংকোচন কেন হয়?

ধরো, তুমি অনেক হালকা তুলার দলা হাতে নিয়ে আছো। যদি তুমি হালকা করে চাপ দাও, তাহলে তুলাটা একটু চেপে ছোট হয়ে যাবে, তাই না? একইভাবে, নেবুলাও মহাকাশে ভাসছে, কিন্তু যখন বাইরের কোনো শক্তি এসে ধাক্কা দেয়, তখন এটি সংকুচিত হতে শুরু করে।


এই ধাক্কা আসতে পারে তিনটি কারণে—

✅ ১. কাছের কোনো সুপারনোভা বিস্ফোরণ হলে

যখন কোনো বড় তারা মারা যায়, তখন তা সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটায়। সেই বিস্ফোরণ থেকে প্রচণ্ড গরম বাতাস এবং শক্তি বের হয়ে চারপাশের নেবুলাকে ধাক্কা দেয়। এতে নেবুলার কিছু অংশ সংকুচিত হয়ে নতুন তারার জন্ম শুরু হয়!
২. কাছের বড় কোনো তারার শক্তিশালী আলো ও বিকিরণ (Radiation) আসলে:
কিছু বিশাল তারা থাকে, যেগুলো থেকে অনেক শক্তিশালী আলো ও বিকিরণ বের হয়। সেই শক্তি নেবুলাকে ধাক্কা দেয়, যার ফলে এটি সংকুচিত হতে পারে।
✅ ৩. দুটি নেবুলার সংঘর্ষ হলে:
যদি মহাকাশে দুটি আলাদা নেবুলা কাছাকাছি চলে আসে বা একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়, তাহলে ভেতরের গ্যাস ও ধুলা সংকুচিত হতে পারে। 


দুটি নেবুলার সংঘর্ষ



3️⃣ প্রোটোস্টার – শিশু তারার জন্ম
এই সংকোচনের ফলে নেবুলার কিছু অংশ ঘন হয়ে ছোট হতে শুরু করে, এবং সেখানে ধীরে ধীরে গ্যাস ও ধুলিকণা একত্রিত হতে থাকে এবং কেন্দ্রীয় অংশে চাপ ও তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। যখন সংকুচিত হওয়া অংশটি আরও ঘন হয়, তখন এটি প্রোটোস্টার (Protostar) নামে পরিচিত হয়, যা একটি শিশুতারা বলা যেতে পারে।
✅ এটি এখনো আসল তারা নয়, কারণ এটি এখনো আলো বা তাপ দিচ্ছে না।
✅ কিন্তু এর ভেতরে চাপ এবং তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, কারণ গ্যাস এবং ধুলো ক্রমাগত একত্রিত হচ্ছে।
✅ এটি ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হতে থাকে এবং আরও গরম হয়।


IC 1396-তে প্রোটোস্টারের বহু-তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্য | NASA Jet Propulsion Laboratory (JPL)


4️⃣ নিউক্লিয়ার ফিউশন - তারার আসল জন্ম:
 একটি তারাকে সত্যিকারের তারা বানানোর জন্য প্রয়োজন নিউক্লিয়ার ফিউশন (Nuclear Fusion)।
✅ একসময় প্রোটোস্টারের কেন্দ্রে তাপমাত্রা এত বেশি (প্রায় ১০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস) হয়ে যায় যে, হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো 
একে অপরের সাথে মিলিত হয়ে হিলিয়াম তৈরি করতে শুরু করে।
✅ এই প্রক্রিয়াতে প্রচণ্ড পরিমাণ শক্তি বের হয়, যা তারাকে উজ্জ্বল করে তোলে।
✅ এখন এটি আর কোনো শিশু তারা নয়, এটি পরিণত হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ তারায়!

5️⃣ নতুন জন্ম নেওয়া তারা-মহাবিশ্বের আলো
যখন নিউক্লিয়ার ফিউশন শুরু হয়, তখন
এটি নিজে থেকে আলো তাপ বিকিরণ করতে পারে।
এটি লক্ষ বা কোটি বছর ধরে জ্বলতে পারে।
এটি মহাবিশ্বের বিভিন্ন অংশে আলো ছড়ায় এবং নতুন গ্রহ তৈরির উপাদান সরবরাহ করে।
এভাবে মহাকাশে একের পর এক নতুন তারা জন্ম নিতে থাকে, আর মহাবিশ্ব জ্বলজ্বল করতে থাকে!
সংক্ষেপে নেবুলা থেকে তারার জন্ম:
 
1️⃣  নেবুলা: মহাকাশে গ্যাস ধুলার বিশাল মেঘ।
2️  সংকোচন: সুপারনোভা বিস্ফোরণ, শক্তিশালী তারার বিকিরণ, বা দুটি নেবুলার সংঘর্ষের ফলে সংকোচন শুরু হয়।
3️  প্রোটোস্টার: সংকুচিত গ্যাস ধুলার মেঘ শিশু তারায় পরিণত হয়।
4️  নিউক্লিয়ার ফিউশনপ্রোটোস্টারের কেন্দ্রে  প্রচণ্ড তাপ চাপে হাইড্রোজেন পরমাণু একত্রিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন করে।
5️  নতুন তারার জন্ম: এটি এখন একটি পূর্ণাঙ্গ তারা, যেমন আমাদের সূর্য!
 


📖 পরবর্তী পর্ব:"তারার জীবনচক্র: স্থিতিশীল জীবনকাল" (জন্ম থেকে মৃত্যু) (পঞ্চম পর্ব) 
তাতে আমরা তারার প্রধান অনুক্রম (Main Sequence) ধাপ সম্পর্কে জানবো।
আমাদের সূর্যও বর্তমানে এই পর্যায়ে রয়েছে এবং এটি কয়েক বিলিয়ন বছর স্থিতিশীল থাকবে।


(ইচ্ছে হলে কমেন্টে জানাতে পারো)
এই পর্বটি কেমন লাগলো? তুমি কি কোনো বিশেষ তারা সম্পর্কে জানতে চাও? 










Post a Comment

0Comments

Thanks everyday

Post a Comment (0)
To Top