✦ রক্তের অশ্রু আর কিবলার কান্না: এক জাতির বিপন্ন ইতিহাস✦
জীবনের সবচেয়ে নির্মম বাস্তবতা হলো—কখনো কখনো চোখের সামনে অন্যায়-অবিচারের একেকটি অধ্যায় রচিত হয়, আর আমরা কিছুই করতে পারি না।
আজ তেমনই একটি অধ্যায় ফিলিস্তিনের বুকে লেখা হচ্ছে। সেই পবিত্র ভূমি, যেখানে নবীরা একদিন হেঁটেছেন, যেখানে দাঁড়িয়ে আছে ঈমানের প্রতীক আল-আকসা—আজ তা পরিণত হয়েছে আগুনের উপত্যকায়, এক মৃত্যুপুরীতে।
শিশুর কান্না থেমে গেছে, কারণ আর কান্নার শক্তিও অবশিষ্ট নেই। মায়েরা সন্তান হারিয়ে নিঃশব্দ হয়ে গেছেন—শব্দ করাও যেন পাপ। প্রতিটি ইট, প্রতিটি কণা যেন চিৎকার করে বলছে: "আমাদের পাশে দাঁড়াও!"
আর আমরা?
আমরা পর্দার আড়ালে চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখি। গুলির শব্দকে বলি “রাজনীতি”, শহীদের রক্তকে “খবর”, আর গাজার ধ্বংসকে “পরিস্থিতি” বলে এড়িয়ে যাই।
কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না—এই পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু জবাবদিহি অনন্ত।
আজ যদি আমরা কিবলার কান্না না শুনি, মজলুমের পক্ষে না দাঁড়াই—কাল সেই কিবলা আমাদের চিনবে না।
✦ বর্তমান বাস্তবতা
বর্তমানে ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করেছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ২০০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৮০ জনেরও বেশি শিশু ও নারী।
গাজা সিটি ও খান ইউনুসের বিভিন্ন এলাকায় হাসপাতাল, শরণার্থী শিবির ও আবাসিক এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে, যার ফলে বেসামরিক জনগণ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
(তথ্যসূত্র: The Times of India)
এছাড়াও, গাজার একমাত্র ক্যান্সার হাসপাতাল হামলার শিকার হয়ে অচল হয়ে গেছে, ফলে চিকিৎসা সেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা 'হিউম্যান রাইটস ওয়াচ' সতর্ক করেছে—এই পরিস্থিতি ক্রমেই গণহত্যার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও তা স্বীকার করেনি।
তারা বলেছে, আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, গত মার্চ থেকে গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধ রয়েছে। এর ফলে খাদ্য ও ওষুধের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৭১,০০০ শিশু গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
✦ ঈমানের আহ্বান
এই সংকটময় সময়ে মুসলিম উম্মাহর উচিত একত্রিত হয়ে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সমর্থন ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা।
وَ مَا لَكُمۡ لَا تُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ الۡمُسۡتَضۡعَفِیۡنَ مِنَ الرِّجَالِ وَ النِّسَآءِ وَ الۡوِلۡدَانِ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَخۡرِجۡنَا مِنۡ هٰذِهِ الۡقَرۡیَۃِ الظَّالِمِ اَهۡلُهَا ۚ وَ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡكَ وَلِیًّا ۚۙ وَّ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡكَ نَصِیۡرًا
> “আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।”
—সূরা নিসা ৪:৭৫
এই আয়াত আমাদের স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেয়: অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো একজন মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব।
✦ আমাদের করণীয়
আমরা যদি সত্যিই উম্মাহর অংশ হতে চাই, তাহলে আমাদের করণীয়—
দোয়া করা—আল্লাহ যেন মজলুমদের সাহায্য করেন
অর্থ সহায়তা পাঠানো—বিশ্বস্ত সংস্থার মাধ্যমে
সচেতনতা বৃদ্ধি করা—লেখা, পোস্ট, আলোচনা মাধ্যমে
আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করা—যেন মানবাধিকার রক্ষা হয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে এই ঈমানি দায়িত্ব পালনের তৌফিক দিন।
আমিন।
Thanks everyday