ছেলের কাছে লেখা এক দুঃখিনী মায়ের চিঠি, তামিম আল আদনানী।

4
ছেলের কাছে লেখা এক দুখিনী মায়ের চিঠি 
 

نحمده نصلي على رسوله الكريم اما بعد।  
.
প্রিয় ভাই ও বোনেরা !
আজ আপনাদের পড়ে শোনাচ্ছি, ছেলের প্রতি পাঠানো কোন এক দুঃখিনী মায়ের হৃদয়বিদারক চিঠি , 
এই চিঠি দুঃখভারাক্রান্ত এক মায়ের পক্ষ থেকে তার কলিজার টুকরা সন্তানের প্রতি প্রেরিত চিঠি,
  
আমার আদরের সন্তান! 
প্রায় ২৫ বছর আগের কথা সে বছরের কোন এক দিনে
আমার জীবনের অবিস্মরণীয় একটি মুহূর্তে যখন আমাকে মহিলা ডাক্তার শোনালেন যে আমি "গর্ভবতী"
মায়েরা এই শব্দের মর্মার্থ ভালো করেই জানেন , এটি এমন শব্দ যা আনন্দের চেয়ে বেশি,
যার পরেই শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক এক পরিবর্তন.
এই সুসংবাদের পর থেকে দীর্ঘ নয় মাস আমি তোমাকে গর্ভে ধারণ করেছি ,
যার প্রতিটি মুহূর্ত ছিল আনন্দের,
ভারত্ব নিয়ে দাঁড়াতে হয় , ঘুমোতে কষ্ট হয়, খেতে মন চায় না, তবুও বাধ্য হয়ে খেতে হয় ,
প্রতিটি নিশ্বাসের সাথে কষ্ট ঝরে পড়ে কিন্তু এতকিছুর পরেও তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা, তোমার জন্য আমার আনন্দে এতোটুকু কমতি ছিল না
বরং দিনের-পর-দিন তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছিল ,
তোমার প্রতি আমার আসক্তি প্রবল হচ্ছিল , ক্লান্তির পর ক্লান্তি ,কষ্টের পর কষ্টের বাঁধনে আমি তোমাকে বহন করেছি কিন্তু যখনই পেটের ভেতর তোমার নড়াচড়া অনুভব হতো, যখন বুঝতাম তোমার ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে, আমার মনে হতো আমি হচ্ছি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী
যদিও তা কষ্টের ছিল, কিন্তু তবুও তা ছিল আনন্দের,
এভাবে কষ্ট আনন্দ মিশ্রিত সময় শেষে 
সে রাতের ফজরের সময় এলো 
যে রাতে আমি চোখের পাতা এক করতে পারিনি.
সে রাত ছিল কষ্টে জর্জরিত এক রাত 
সে রাত ছিল ভয় ও আশঙ্কার এক রাত,
যে কষ্ট ভয় কোন ভাষা প্রকাশ করতে পারে না, মৃত্যু যেন আমাকে ছুয়ে যাচ্ছিল,
আল্লাহর কসম ,হে আমার সন্তান! 
আমি যেন দেখছিলাম মৃত্যু আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, এক সময় তুমি পৃথিবীতে আসলে, তোমার ক্রন্দন ধ্বনি আর আমার অশ্রু একাকার হয়ে সেই মুহূর্তটি আমার সকল কষ্ট যন্ত্রণাকে একেবারে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিল,

হে আমার সন্তান!
কত বছর আমি তোমাকে লালন করেছি
তোমাকে নিজ হাতে গোসল করিয়েছি, তোমাকে বুকের দুধ খাইয়েছি, 
কোলের উপর শুইয়ে ঘুম পাড়িয়েছি, তোমার ঘুমের জন্য কত রাত জেগেছি!
তোমার খুশির জন্য দিনের ক্লান্তিকে সঙ্গী করেছি, আমার সর্বক্ষণের আশা থাকতো
কখন তোমার ভুবনভরা হাসিটি দেখব, তুমি আমার কাছে কিছু আবদার করবে আর আমি তা ততক্ষণাত প্রস্তুত করব,
এ ছিল আমার জন্য সর্বোচ্চ সৌভাগ্যের,
এভাবে বহুদিন পর হল যে আমি তোমার পরিচর্যায় চেষ্টার কোন ত্রুটি করিনি, অবিরত তোমার খেয়াল রেখেছি,
অবিরাম তোমার কল্যাণের চেষ্টা করে গিয়েছি , এভাবে একদিন তুমি কিশোর হলে, কিশোর থেকে তরুণ হলে, একসময় তোমার মাঝে পুরুষের চিহ্ন দেখতে শুরু করি, অন্তঃপর তোমার প্রশান্তির জন্য চারপাশে তোমার জীবন সঙ্গিনীর খোঁজ করতে থাকি অতঃপর এলো তোমার বিয়ের দিনটি, তোমার জীবনের এমন পূর্ণতায় আমার অন্তর আনন্দে ভরে গেল, খুশিতে চোখে পানির বার নামলো, কিন্তু কিছু সময় পর তোমার একি হলো!
আমি তোমার আচরণে আশ্চর্য হয়ে তোমাকে দেখে ভাবছিলাম-
এ তো আমার সেই সন্তান নয় যাকে আমি চিনতাম,
তুমি আমার প্রতি বিরূপ আচরণ করলে,
আমার অধিকার তুমি ভুলে গেলে, 
কতদিন কেটে গেছে তোমাকে দেখি না,
তোমার কথা শুনি না,
তুমি তো তোমার মাকে ভুলেই গেলে , 

হে আমার সন্তান! 
তোমার কাছে আমি বেশি কিছু চাচ্ছি না, তুমি কেবল তোমার বন্ধুবান্ধবের পাশে আমাকে একটু জায়গা দিও, তোমাকে দেখার একটু সুযোগ করে দিও, মাসের কোন একটি দিনে অন্তত কিছু মুহূর্তের জন্য হলেও তোমাকে দেখার  একটু সুযোগ করে দিও ,
হে আমার সন্তান !
আমার পিঠ কুজু হয়ে গেছে দৃষ্টিশক্তি একেবারে ক্ষীণ হয়ে এসেছে অসুস্থতা আমাকে একেবারে দুর্বল করে দিয়েছে, 
দাঁড়াতে কষ্ট, বসতে গেলে বেদনা এসে ভর করে , বয়সের ভারে আমি নুয়ে পড়েছি কিন্তু আমার অন্তর তোমার ভালবাসায় এখনো সজীব আগের মতই, 
হে আমার সন্তান !
কেউ যদি কারো প্রতি সামান্যতম উপকার দেখায় তার প্রতি মানুষ কৃতজ্ঞ হয়, তার প্রশংসা করে
কিন্তু আমি তো তোমার মা, 
একজন মা'ই সন্তানের সর্বোচ্চ সেবা যত্ন করে থাকে, সন্তানের পরিচর্যা করে,
যে সেবাযত্নের, যে পরিচর্যার কোন তুলনাই হয় না, যার কোন বিনিময় হয় না. 
আমি তোমার যত্ন নিয়েছি , 
বছরের পর বছর তোমার সেবা করেছি ,
কোথায় আমার সেই পরিচর্যার প্রতিদান! তুমি তো আমায় ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেলে,
যামানা তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিল অনায়াসে ,

হে আমার সন্তান! 
যখনই আমি শুনি তুমি সুখে শান্তিতে জীবন অতিবাহিত করছ আমি সীমাহীন আনন্দে সিক্ত হই ,
কিন্তু আমি আশ্চর্য হই-তোমাকে আমি কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি
কি এমন দোষ করেছি যার কারণে আমি তোমার শত্রুতে পরিণত পেয়েছি ,
যার কারণে আমি তোমাকে সামান্য সময়ের জন্যও কাছে পাই না,
যার কারণে তুমি আমার প্রতি এত বিরক্ত, এত ক্ষুব্ধ!
তোমার নামে প্রতুর কাছে আমি কোনো অভিযোগ করবো না, আমার দুঃখকে আকাশ-পানে ছুটতে দেবো না
কারণ যদি এই দুঃখ আমার বুক থেকে আকাশের রবের কাছে গিয়ে নালিশ জানায় তবে তোমার জীবনে দুঃখ দেখা দিতে পারে,
নানাভাবে তুমি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারো ,
না না না কখনো না,
কখনো এমনটি হবে না,
তুমি তো আমার কলিজার টুকরো ,
আমার জীবনের সার্থকতা,
দুনিয়াতে পাওয়া আমার সর্বোত্তম উপহার,
হে আমার সন্তান !
আমার কলিজার টুকরো!
জাগ্রত হও ! জাগ্রত হও!
দিন গড়াচ্ছে  বছর ঘনিয়ে আসছে, একসময় তুমিও পিতা হবে একসময় তুমিও বৃদ্ধ হবে
হায়! কর্ম যেমন'ই হয় ফলও তো তেমন'ই হয়ে যায় ,
এমন যেন না  তুমিও অশ্রু দিয়ে তোমার সন্তানের কাছে এভাবে মিনতি পেশ করছো!
আল্লাহর কাছেই তো সকল অভিযোগ যায় ,

হে আমার সন্তান !
তোমার মায়ের অধিকার আদায়ে আল্লাহকে ভয় করো!
তার চোখের অশ্রুকে মুছে দাও!
তার হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দাও!
এরপরও যদি ইচ্ছে করে তবে তার চিঠিটি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দাও!
জেনে রেখো!
কেউ যদি নেক আমল করে তবে পুরস্কার সে পাবেই
আর যে মন্দ আমল করে সেই মন্দ আমল তার ক্ষতি করে।
واخفض لهما جناح الذل من الرحمة
و قل ربي ارحمهما كما ربياني صغي را
তাদের জন্য নম্রভাবে সদয়ের বাহুকে প্রসারিত করে দাও!
আর বলো
হে আমার প্রতিপালক!
তাদের প্রতি দয়া করুন যেমন ভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন পালন করেছে!

                                                   আল কোরআন 

           
     

Post a Comment

4Comments

Thanks everyday

Post a Comment
To Top