তুফানুল আকছা / ফিলিস্তীন নিয়ে মাওলানা আবু তাহের মেছবাহ (আদীব হুযূর)-এর একটি পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকার। মাসিক আর কলম (পুষ্প) Ofde islam

0

 

(তৃফানুল আকছা শুরু হওয়ার পর থেকে দিলের তামান্না ছিলো পুষ্পের সম্পাদক (আদীব হুযূর)-এর একটি পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করার, যাতে মুসলিম উম্মাহ্র দীর্ঘদিনের রক্তক্ষরণকারী ফিলিস্তীনসমস্যার মূল প্রকৃতি সবার সামনে, বিশেষ করে পুষ্পের পাঠকবর্গের সামনে পরিষ্কারভাবে উঠে আসে। কারণ আমার জানামতে মুসলিম উম্মাহ্র প্রতিটি মর্মস্তুদ ঘটনাপ্রবাহের প্রতি তাঁর যেমন দরদপূর্ণ অনুভূতি রয়েছে তেমনি রয়েছে অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ জ্ঞান। সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য আমার দৃষ্টিতে সবচে' উপযুক্ত ব্যক্তি হলেন পুষ্পের সহসম্পাদক (মাওলানা মুহম্মদ বিন মিছবাহ) তিনি তো সহজেই সম্মত হলেন, কিন্তু হুযুরের বিষয়ে বড় তারাদ্দুদ ছিল তাঁর বর্তমান স্বাস্থ্যগত অবস্থার কারণে। আল্লাহ্র শোকর, আমাদের কথা শুনে হুযুর বললেন, আমারও দিলের চাহাত ছিলো যে, এ বিষয়ে তোমাদের সঙ্গে 'মতবিনিময়' করি। কারণ ফিলিস্তীন সমস্যা, এত দীর্ঘকাল থেকে চলে আসছে, আর ধীরে ধীরে তা এত জটিল রূপ ধারণ করেছে যে, বিদ্বান ও সচেতন মানুষ পর্যন্ত ভুল ধারণার, বা খণ্ডিত ধারণার শিকার। অথচ উম্মাহর এমন বেদনাদায়ক বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা খুবই দরকার, বিশেষ করে আমাদের নতুন প্রজন্মের। তো এখানে সাক্ষাৎকারটি পুষ্পের পাঠকের উদ্দেশ্যে পত্রই করা হলো- মুহম্মদ ইউনুস)




সহসম্পাদক: ফিলিস্তীনের সমস্যা যেমন দীর্ঘ ও
জটিল, তেমনি রক্তাক্ত ও মর্মন্তুদ, তো আপনার মতে সমস্যার শুরু কবে এবং এর মূল রূপটি কী।

সম্পাদকঃ দেখো, একমাত্র ব্যক্তি যিনি বৃটিশ
সাম্রাজ্যবাদের আসল হাকীকত বুঝতে পেরেছিলেন হিন্দুস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রদূত, রেশমিরুমাল আন্দোলনের রূপকার, আমাদের মহান শায়খুল হিন্দ হযরত মাওলানা মাহমূদুল হাসান রহ.। তাঁর বিখ্যাত মন্তব্য হলো, 'সাগরের তলদেশে মাছেরা যদি কলহবিবাদে লিপ্ত হয়, বুঝতে হবে, এর পিছনে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের চাল রয়েছে।' 
অর্থাৎ তাঁর মতে পৃথিবীর যে কোন সমস্যার পিছনে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদই দায়ী। 
অন্তত মুসলিম উম্মাহর ক্ষেত্রে তো বিষয়টা সর্বাংশে সত্য। 
এই যে আমাদের কাশ্মীরসমস্যা, বৃটিশরা যদি চাইতো সহজেই সীমান্তরেখা এমনভাবে টানতে পারতো যাতে সমস্যার জন্মই না হয়, কিন্তু কথা হলো, সমস্যাই যদি না থাকে, সালিশ বা মোড়ল আসবে কোত্থেকে। আর মুসলিম উম্মাহকে দাবিয়ে রাখা যাবে কীভাবে!

সহসম্পাদক: তাহলে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদই হচ্ছে ফিলিস্তীন-সমস্যার আসল জন্মদাতা।

সম্পাদক: কথাটা এভাবে বলা যায় যে, বিশেষভাবে যারা বৃটিশইহুদী!


সহসম্পাদক: আরো বিশদ করে বলুন!

 সম্পাদক: দেখো, পুরো ইউরোপের অর্থনীতি ও  রাজনীতি গোড়া থেকেই নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে ইহুদীসম্প্রদায়। এরা ছড়িয়ে আছে বৃটেন, ইউরোপ ও আমেরিকাসহ পৃথিবীর সবদেশে। 
নাগরিক হিসাবে এরা বৃটিশ, ইউরোপীয়, আমেরিকান ইত্যাদি, তবে ধর্মের পরিচয়ে ইহুদী এবং ইহুদীবাদী!

 সহসম্পাদক: ইহুদী ও ইহুদীবাদী, পার্থক্য কী?

সম্পাদক: যারা শুধু ইহুদী ধর্মের অনুসারী তারা হলো ইহুদী, 
পক্ষান্তরে যারা ইহুদী সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী এবং ছলে বলে কৌশলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় সংকল্পবদ্ধ, তারা ইহুদীবাদী, তাদের এ চিন্তাচেতনা ও মানসিকতা হলো
ইহুদীবাদ।

সহসম্পাদক: একসময়ের তুখোড় মার্কিন পররাষ্ট্র- মন্ত্রী কিসিঞ্জার ইহুদী ছিলেন! 

সম্পাদক: বর্তমান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি
ক্লিনকেনও ইহুদী, বরং কট্টর ইহুদীবাদী! তোমার হয়ত মনে থাকবে, তৃফানুল আকছা শুরু হওয়ার পরপরই তিনি উড়ে গিয়েছিলেন তেলআবীব। 
নেতানিয়াহুর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, আমি শুধু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রূপেই আসিনি বরং আমি একজন ইহুদীরুপেও  এসেছি।
ট্রাম্পের জামাতা কুশনার, “”বিন সালমান”” যাকে বন্ধু বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন, তিনি তো কট্টর ইহুদীবাদী। এই সেদিন পর্যন্ত সমস্ত কলকাঠি তিনিই নেড়েছেন!

সহসম্পাদক: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও ইহুদী! বিষয়টা অবশ্যই আমাদের চিন্তায় রাখা জরুরি!

সম্পাদক: বিলকুল ঠিক! আমরা শুধু রাজনৈতিক ও নাগরিক পরিচয়টাই মনে রাখি, ধর্মপরিচয় ভুলে যাই, ফলে বারবার প্রতারিত হই। অথচ ইহুদীর কাছে তার ধর্ম ও আদর্শিক -পরিচয়টা সবার আগে, নাগরিক পরিচয় পরে!

সহসম্পাদক: এরা যেখানেই আছে, জাতি হিসাবে অভিশপ্তরূপেই আছে।

সম্পাদক: কোরআন তো তাই বলে। কিন্তু ঘটনা হলো, এ জাতিটাকে আল্লাহ্ অভিশপ্ত বলেছেন, তবে দেমাগ ও কূটবুদ্ধি যেমন দিয়েছেন তেমনি দিয়েছেন বণিকবুদ্ধি। এমনকি নবুয়তেরও আগে ইয়াছরিবের সমাজে এটাই ছিলো ইহুদীচরিত্রের আসল রূপ। জার্মানিতেও সবকিছু ছিলো ইহুদীদের নিয়ন্ত্রণে, যার কারণে হিটলারের জাতিক্রোধ নেমে এসেছিলো তাদের উপর। হিটলারের নৃশংসতা আমরা কিছুতেই সমর্থন করি না, কোন বিবেকবান মানুষই সমর্থন করতে পারে না। অবশ্য যে কোন নৃশংসতাই ঘৃণার। গ্রেট বৃটেনে প্রভাবশালী বহু বৃটিশইহুদী ছিলো। 
ইমরান খানের 'শ্বশুর' হলেন ইহুদী ধনকুবের জেমস গোল্ড স্মিথ ।
তো বিশ্বইহুদীবাদ ও বৃটিশ ইহুদি কম্যুনিটির চাপে বা প্ররোচনায় বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ চিন্তা করলো, ইহুদীদের একটি আলাদা রাষ্ট্র করে দেয়া দরকার। প্রথম দিকে চিন্তা ছিলো, সেটা করা হবে ইউরোপের কোন ভূখণ্ডে। সেটাই ছিলো যুক্তিসঙ্গত...

সহসম্পাদক: থিউডর হার্জেল তার দিনলিপিতে লিখেছেন, ফিলিস্তীনে বা আর্জেন্টিনায় হতে পারে!

সম্পাদক: প্রথমে তাই ছিলো তার চিন্তা, কারণ তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, খলীফা আব্দুল হামীদ কিছুতেই তা মানবেন না। পরে অবশ্য হার্জেল সিদ্ধান্তে আসেন, ফিলিস্তীনই হবে ইহুদীদের বাসভূমি, প্রয়োজনে খলীফাকে সিংহাসন থেকে উৎখাত করা হবে।

 সহসম্পাদক: ইউরোপীয় ভূখণ্ডই উপযুক্ত ছিলো কী কারণে?

সম্পাদক: কারণ মুসলিম উম্মাহ ইহুদীদের উপর কখনো যুলুম করেনি, বরং জাতিগতভাবেই তাদের সঙ্গে সদাচার করে এসেছে। গাযী ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী রহ. যখন বাইতুল মাকদিস জয় করেন তখনো, মুসলিমরা যখন স্পেন ও আন্দালুসিয়া শাসন করে তখনো, আবার স্পেন থেকে যখন মুসলিমদের সঙ্গে ইহুদীরাও বিতাড়িত হয় তখনো। সালতানাতে উছমানিয়া মুসলিমদের যেমন গ্রহণ করেছে, ইহুদীদেরও তেমিন আশ্রয় দিয়েছে।

 সহসম্পাদক: মাঝখানে বলতে হচ্ছে, আপত্তি তোলা হয় যে, নবুয়তের যামানায় তো মদীনা থেকে এবং পরবর্তী সময়ে খায়বার থেকে ইহুদীদের.......!!

সম্পাদক: এটা তো যুলুম ছিলো না! পৃথিবীর যে কোন রাষ্ট্র এমন সিদ্ধান্তই নিতো; বরং ইহুদীদের কারণ যে অন্তর্ঘাতমূলক অপরাধ, সে তুলনায় তো শাস্তির মাত্রা কমই ছিলো।

সহসম্পাদক: জ্বি, আগের প্রশ্নে ফিরে আসি! 

সম্পাদক: ইহুদীদের উপর নির্যাতন যেহেতু ইউরোপ করেছিলো, বাস্তুভিটা থেকে তাদের উচ্ছেদ যেহেতু জার্মানের হিটলার করেছিলো সেহেতু ইউরোপেরই দায়িত্ব ছিলো তাদের পুনর্বাসনের। 
কিন্তু ইহুদীদের তো আগে থেকেই  লক্ষ্য ছিলো ফিলিস্তীনের পবিত্র ভূমি, তাই বৃটিশের কাছে তারা জোরালো আব্দার জানালো ফিলিস্তীনে তাদের আলাদা রাষ্ট্র গড়ে দেয়ার। 
তো ইহুদীদের এ অন্যায় আব্দার পুরা করার জন্যই বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ পরবর্তী সময়ে যা কিছু করার না করেছে।...

সহসম্পাদক: ইহুদীদের দাবীর পক্ষে ধর্মীয় অধিকারের কথা বলা হয় যে, ফিলিস্তীন হলো তাদের প্রতিশ্রুত ভূমি (The Promise Land)!

সম্পাদক: এখান থেকেই মূলত ইহুদীদের পুনর্বাসনসমস্যা রাজনৈতিক রূপের পরিবর্তে ধর্মীয় রূপ ধারণ করে, আর বিশ্বের সমস্ত সাম্রাজ্যবাদী যে শক্তি মুসলিম উম্মাহকে পর্যুদস্ত করার মহাসুযোগ হিসাবে ইহুদীদের কথিত 'ধর্মীয়' বক্তব্য লুফে নেয়। অথচ যখনই মুসলিম উম্মাহর প্রসঙ্গ আসে তখনই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চিৎকার শুরু করে যে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি অপরাধ। ধর্মনিরপেক্ষতাই হলো আদর্শ রাষ্ট্রীয় নীতি!

সহসম্পাদক: ইহুদীদের এই যে ধর্মীয় বক্তব্য, 'প্রতিশ্রুত ভূমি', এর হাকীকত কী!

সম্পাদক: এ সম্পর্কে আলাদা একটি মযমূন লেখার ইচ্ছে আছে। 
সংক্ষেপে এই যে, ইহুদীদের দাবী হলো, মূলত হযরত ইবরাহীম আ.কে আল্লাহ্ ওয়াদা করেছেন যে, তিনি তাঁকে এবং তাঁর বংশধরকে একটি বাসভূমি দান করবেন। ইহুদীদের দাবীমতে সেটা হলো ফিলিস্তীনের ভূমি। এমনকি ইহুদিবাদীরা তো তাওরাতের সূত্র ধরেই গ্রেটার ইসরাইলের দাবী করে, যার সীমান্ত হবে ফুরাতনদী পর্যন্ত....!
প্রথম কথা হলো, হযরত ইসহাক যেমন বংশধর তেমনি হযরত ইসমাঈল আ.ও তো হযরত ইবরাহীমআ.র বংশধর!

দ্বিতীয় কথা হলো, আল্লাহর পক্ষ হতে এমন প্রতিশ্রুতি তো জাতিগত ও বর্ণগত ভিত্তির উপর কিছুতেই হতে পারে না, বরং হতে পারে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত, আনুগত্য ও তাঁর আদেশ-নিষেধ মানার উপর। 'নির্বাচিত জাতি' হওয়ার ভিত্তিও হতে পারে শুধু এটি, নিছক বংশপরিচয় ও বর্ণপরিচয় নয়! 
তাওরাতেও এটা বলা হয়েছে।

তৃতীয় কথা হলো, তারা তো আল্লাহর দান প্রত্যাখ্যান করেছিলো এ কথা বলে যে, 'ওখানে তো প্রতাপান্বিত এক জাতি বাস করে, ...! সুতরাং আয় মূসা, তুমি এবং তোমার প্রতিপালক যাও এবং (ওদের বিরুদ্ধে) লড়াই করো, আমরা তো এখানেই বসে থাকবো।
সবচে' বড় কথা, ওরা তো বারবার আল্লাহর নবীদের হত্যা করার মহাঅপরাধ করেছে!
আরো দেখো, হযরত ইবরাহীম আ. যখন আব্দার জানালেন,
'আমার সন্তান-সন্ততি থেকেও ...!
তখন  আল্লাহ্ পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, 'আমার প্রতিশ্রুতি , যালিমীনকে শামিল করবে না।'
বনী ইসরাইলকে সম্বোধন করে আল্লাহ্ পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, আমাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি তোমরা পালন করো, আমিও তোমাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি স পালন করবো। এটা আখেরী নবীর উপর ঈমান ই আনার প্রতিশ্রুতি, তখন আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এভাবে পূর্ণ হবে যে, তখন তারা ফিলিস্তীনে প্রবেশের মুক্ত অধিকার লাভ করবে।

সহসম্পাদক: 'প্রতিশ্রুত ভূমি' তো নাম নয়, নাম তো হলো ফিলিস্তীন, আরদে ফিলিস্তীন।

সম্পাদকঃ জ্বি এটাও গুরুত্বপূর্ণ কথা। আবাদী ও জনবসতি তো তথাকথিত 'প্রতিশ্রুতি'র বহু আগে থেকেই ফিলিস্তীনে চলে আসছে! ভূমিপুত্ররূপে তারা তো ফিলিস্তীনের হকদার! এখন, যে কিতাবের ন্যূনতম প্রামাণ্যতা নেই, ঐ কিতাবের ধর্মীয় বচনের ভিত্তিতে কোন ভূখণ্ডের ভূমিপুত্রের অধিকার কীভাবে ছিনতাই হতে পারে! আর তাদেরই বা আত্মরক্ষার অধিকার কেন থাকবে না। তাদের তো আল্লাহ্ বলেননি যে, আমার 'নির্বাচিত' জনগোষ্ঠীর জন্য এ ভূমি তোমরা খালি করে দাও! আসল কথা হলো, তখন পবিত্র ভূমিতে হামলা করার আদেশ পাপাচারী ও যালিম আমালিকা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে, যাদের অস্তিত্ব এখন আর নেই। এখন ফিলিস্তীনে যারা বাস করছে তারা দখলদার, বরং ভূমিপুত্ররূপেই হাজার বছর ধরে শান্তিতে বাস করে আসছে।

সহসম্পাদক: ফিলিস্তীনের মূল আবাদী কত প্রাচীন?

সম্পাদকঃ নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে ফিলিস্তীন হচ্ছে পৃথিবীর প্রাচীনতম অঞ্চলগুলোর একটি। প্রত্নতাত্ত্বিক খননও প্রমাণ করে যে, ফিলিস্তীন হলো প্রথম ভূখণ্ড, যেখানে কৃষিভিত্তিক জীবনের ধারা শুরু হয়েছে। সময়কাল হলো খৃস্টপূর্ব নয় হাজার বছর। এমনকি খৃস্টপূর্ব ১২ হাজার বছর আগেই গড়ে উঠেছে আরীহা শহর। সেমিটিক আরবজনগোষ্ঠীর স্থায়ী বসবাস শুরু হয় খৃস্টের ছয়হাজার বছর আগে। কানানী আরবজনগোষ্ঠী বসবাস শুরু করে খৃস্টের তিনি হাজার বছর আগে।

সহসম্পাদক: ফিলিস্তীনের ভূমির উপর ইহুদীদের দাবীর তাহলে ঐতিহাসিক ভিত্তি কী?

সম্পাদক: ধর্মীয়, ভৌগোলিক, নৃতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক কোন ভিত্তিতেই তাদের দাবী ঐ পবিত্র মাটিতে শিকড় পায় না। আরবরা তো ইসলাম গ্রহণের কয়েক হাযার বছর আগেই ফিলিস্তীনে বসতি স্থাপন করেছে। ইহুদীদের বসতি ও রাজ্যপ্রতিষ্ঠারও হাযার বারশ বছর আগেই গড়ে উঠেছে ফিলিস্তীনে আরবভূমি- পুত্রদের বসতি। তারপর তো পনেরো হিজরীতে (৬৩৬ খৃ.) পুরো শাম ও ফিলিস্তীন মুসলিম অধিকারে আসে। এটা ছিলো ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর রা.র শাসনকাল। তখন থেকে আজ পর্যন্ত ঐ পবিত্র ভূমিতে মুসলিম উম্মাহ্র অধিবাস চলে এসেছে অব্যাহতভাবে।

সহসম্পাদক: তাহলে ফিলিস্তীনের ভূমিতে - ইহুদীদের অবস্থানের প্রকৃতি কী?

সম্পাদক: হযরত দাউদ আ. ছিলেন বনী ইসরাইলে প্রেরিত আল্লাহর নবী। তিনি প্রথম ফিলিস্তীনের একাংশে রাজত্ব স্থাপন করেন। পরে তাঁর পুত্র হযরত সুলাইমান আ. রাজত্বকে আরো বিস্তৃতি দান করেন। বলা যায় তখন সেখানে গড়ে ওঠে ইহুদীদের বসতি, তবে তা পুরো ফিলিস্তীনে নয়, বরং তার কিছু অংশে। তাদের বসতি ও রাজত্ব সেখানে টিকে ছিলো মাত্র চারশ বছর (খৃ.পূর্ব ১০০০ থেকে ৫৮৬) পর্যন্ত।
তারপর তারা সেখান থেকে এমন নির্মূল হয়ে যায় সে যে, দীর্ঘ একহাজার আটশ বছর ফিলিস্তীনে তাদের কোন অস্তিত্বই ছিলো না, এমনকি ধর্মীয় স্থান হিসাবেও সেখানে তাদের আসা যাওয়ার সম্পর্ক পর্যন্ত ছিলো না।

সহসম্পাদকঃ আল্লাহর এ দুই নবী সম্পর্কে ইহুদীদের বিশ্বাস ও আচরণ কেমন ছিলো?

সম্পাদক: বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের জন্য জাযাকাল্লাহু খায়রান। ইহুদীরা বলে রাজা ডেভিড ও রাজা সলেমোন। তো এ দুই রাজা সম্পর্কে তাদের এমন জঘন্য ও লজ্জাজনক মন্তব্য রয়েছে যে...! অথচ আমাদের ধর্মে পিতাপুত্র দু'জনই আল্লাহর বিশিষ্ট নবী! সুতরাং তাঁদের প্রকৃত উত্তরাধিকারী তো মুসলিম উম্মাহ্!

সহসম্পাদক: মুসলিম উম্মাহ্র বসতি সেখানে কখন থেকে?

সম্পাদক: ফিলিস্তীনের ভূমিতে মুসলিম উম্মাহর শাসনক্ষমতা অব্যাহত ছিলো ৬৩৬ খৃ. থেকে ১৯১৭ খৃ. পর্যন্ত। কল্পনা করতে পারো! সেই জাতিকে যদি কেউ ইতিহাসের সুদীর্ঘ অন্ধকার থেকে বের হয়ে এসে বলে, এ ভূমি 'সদাপ্রভু' আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন, সুতরাং হয় নরমে বের হও, না হয় গরমে বের করবো তাহলে...! পৃথিবীর আর কোন জাতির সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে কখনো, না ঘটতে পারে!

সহসম্পাদক: ফার্স্ট টেম্পল সম্পর্কে কিছু বলবেন! কারণ ইহুদীবাদীরা দাবী করে, আলআকছার স্থানে তারা থার্ড টেম্পল গড়ে তোলবে!

সম্পাদক: জ্বি, এতদিন বলেছে দম্ভের সঙ্গে, তবে হামাসের মুজাহিদীন তুফানুল আকছা অভিযান দ্বারা ইহুদিবাদ ও ইসরাইলের কোমর এমন ভেঙ্গে দিয়েছে যে, সামনে আশা করি এমন কথা বলার আগে একবার হলেও চিন্তা করবে। আসল কথা হলো, সোলায়মান আ. তাঁর তে রাজত্বের সময় কূদসে একটি ইবাদতখানা বানিয়েছিলেন, যা ফার্স্ট টেম্পলরূপে পরিচিত। বীয় ব্যাবিলনের সম্রাট নেবুকাডনেযার যখন ইহুদীদের উপর আসমানের আযাব হয়ে নেমে আসে, তখন ঐ ইবাদতখানাসহ গোটা যেরুসালিম মাটির সঙ্গে তারা মিশিয়ে দিয়েছিলো। মূলত তখনই












Post a Comment

0Comments

Thanks everyday

Post a Comment (0)
To Top