মহাশূন্যে তারার ধরন ও শ্রেণিবিন্যাস ! মহাশূন্যের গহীনে. ২য় পর্ব

1

⭐ তারার ধরন ও শ্রেণিবিন্যাস – দ্বিতীয় পর্ব

প্রথম পর্বে আমরা মহাশূন্যে নক্ষত্রের সৃষ্টি ও তাদের প্রাথমিক অবস্থার কথা আলোচনা করেছি। নক্ষত্রের জন্ম এবং তাদের প্রাথমিক শক্তি ও গঠন সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানার পর, আজকের পর্বে আমরা আরও গভীরে প্রবেশ করবো। তারারা একরকম নয়—এদের আকার, উজ্জ্বলতা, তাপমাত্রা ও জীবনকাল ভিন্ন হতে পারে। বিজ্ঞানীরা তারাগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করেছেন, যাতে আমরা সহজে তাদের সম্পর্কে জানতে পারি। আজ আমরা তারার ধরন ও শ্রেণিবিন্যাস নিয়ে আলোচনা করবো।

---


🌈 ১. তারার রঙ ও তাপমাত্রা
তারার রঙ দেখে আমরা তাদের তাপমাত্রা বুঝতে পারি। সাধারণত, উষ্ণ তারা নীলচে এবং অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা তারা লালচে হয়।
➡ সহজ করে বললে, নীল তারা: সবচেয়ে গরম তারা। এর তাপমাত্রা ৩০,০০০°C বা তারও বেশি হতে পারে। নীল তারা খুবই উজ্জ্বল এবং গরম থাকে, কারণ তাদের মধ্যে শক্তি উৎপাদনের জন্য অনেক বেশি তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়।
➡লাল তারা: সবচেয়ে ঠান্ডা তারা। এর তাপমাত্রা ৩,৫০০°C-এর কম থাকে। যদিও তারা কিছুটা কম তাপমাত্রার হয়, তবে তাদের তেজ বা উজ্জ্বলতা অনেক বেশি সময় ধরে থাকে।
এভাবে, আমরা রঙ দেখে একটি তারার তাপমাত্রা এবং তেজ সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি।

---

মহাশূন্যে তারাদের জন্মরহস্য ! মহাশূন্যের গহীনে . প্রথম পর্ব


🔭 ২. তারার শ্রেণিবিন্যাস (Harvard  Classification)
বিজ্ঞানীরা তাপমাত্রা ও রঙের ভিত্তিতে তারাদের সাতটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন
সাতটি শ্রেণি হলো O, B, A, F, G, K, M
💡 শ্রেণিগুলো মনে রাখার কৌশল: "Oh Be A Fine Girl, Kiss Me"(ওহ বি এ ফাইন গার্ল, কিস মি)
➡ চলো এই সাতটি শ্রেণী সম্পর্কে প্রথমে কিছু ধারণা নিই !


১. O-শ্রেণির তারা: গাঢ় নীল তারকা
রং: গাঢ় নীল 
তাপমাত্রা: ৩০,০০০ - ৫০,০০০ কেলভিন
উদাহরণ: Zeta Puppis
O-শ্রেণির বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
সবচেয়ে উত্তপ্ত এবং উজ্জ্বল  হয়ে থাকে। 
শক্তিশালী অতিবেগুনী (UV) রশ্মি নির্গত করে।
সাধারণত খুব বিরল হয় এবং জীবদ্দশা তুলনামূলকভাবে কম।

২. B-শ্রেণির তারা: নীল-সাদা তারকা 

রং: নীলচে-সাদা
তাপমাত্রা: ১০,০০০ - ৩০,০০০ কেলভিন
উদাহরণ: রিগেল (Rigel)
B-শ্রেণির বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
প্রচণ্ড আলো বিচ্ছুরণ করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্যাসের বিশাল মেঘ (nebula) তৈরি করতে সাহায্য করে। মহাকাশে O-শ্রেণীর তুলনায় বেশি দেখা যায়।

৩. A-শ্রেণির তারা: সাদা তারকা
রং: উজ্জ্বল সাদা
তাপমাত্রা: ৭,৫০০ - ১০,০০০ কেলভিন
উদাহরণ: সিরিয়াস (Sirius)
A-শ্রেণির বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
হাইড্রোজেনের শোষণ রেখাগুলো খুব স্পষ্ট দেখা যায়।
খালি চোখে দৃশ্যমান অনেক উজ্জ্বল তারা A-শ্রেণীর হয়ে থাকে।

৪. F শ্রেণির তারা : হালকা হলুদ-সাদা তারকা
রং: হালকা হলুদ-সাদা
তাপমাত্রা: ৬,০০০ - ৭,৫০০ কেলভিন
উদাহরণ: Procyon
F-শ্রেণির বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
তুলনামূলকভাবে দীর্ঘস্থায়ী হয়।
এই শ্রেণিতে বসবাসের  উপযোগী গ্রহ থাকার সম্ভাবনা বেশি।

৫. G শ্রেণির তারা : হলুদ তারকা
রং: হলুদ
তাপমাত্রা: ৫,২০০ - ৬,০০০ কেলভিন
উদাহরণ: সূর্য (Sun)
G -শ্রেণির বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
আমাদের সূর্য এই শ্রেণির মধ্যে পড়ে। এগুলো সাধারণত দীর্ঘজীবী ও উত্তপ্ত হয় কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম উজ্জ্বল । পৃথিবীর মতো গ্রহের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত তারা শ্রেণী।

৬. শ্রেণির তারা :  কমলা তারকা

রং: কমলা
তাপমাত্রা: ৩,৭০০ - ৫,২০০ কেলভিন
উদাহরণ: আলডেবারান (Aldebaran)
K-শ্রেণির বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা এবং দীর্ঘস্থায়ী তারা।
জীবন ধারণের জন্য উপযোগী গ্রহ থাকার ভালো সম্ভাবনা থাকে।

৭. M শ্রেণির তারা : লাল তারকা
রং: লাল
তাপমাত্রা: ২,০০০ - ৩,৭০০ কেলভিন
উদাহরণ: প্রক্সিমা সেন্টাউরি (Proxima Centauri)
M-শ্রেণির বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
সবচেয়ে বেশি প্রচলিত তারা; মহাবিশ্বের প্রায় ৭০% তারা এই শ্রেণীর।
সবচেয়ে ঠান্ডা এবং দীর্ঘস্থায়ী, তবে খুব কম উজ্জ্বল।
কম শক্তি উৎপন্ন করে, তাই এর চারপাশের গ্রহগুলোর আবহাওয়া স্থিতিশীল থাকতে পারে।
অনেক M-শ্রেণীর তারাকে "লাল বামন" (Red Dwarf) বলা হয়।

’এই শ্রেণীবিভাগের মাধ্যমে আমরা তারার ভিন্ন ভিন্ন গুণাবলি, তাপমাত্রা এবং বয়স বুঝতে পারি।’

🌟 আমাদের সূর্য G-শ্রেণির একটি হলুদ তারা। 
’সূর্য G শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত যা O শ্রেণী থেকে তুলনামূলক অনেক কম উজ্জ্বল, তা সত্ত্বেও আমরা সূর্যকে সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল দেখতে পাই তার নিকটে অবস্থানের কারণে,  সূর্য পৃথিবী থেকে ১৫ কোটি কিলোমিটার (১ AU) দূরে অবস্থিত। অন্যদিকে  O-শ্রেণীর নক্ষত্রগুলো সাধারণত হাজার থেকে লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে থাকে।’

---

🌀 ৩. তারার জীবন ও আকার অনুসারে শ্রেণিবিন্যাস
তারার জীবনচক্র অনুযায়ী তাদেরকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়।

1️⃣ প্রধান অনুক্রম তারা (Main Sequence Stars)

✔ এগুলো সাধারণ তারা, যেগুলো ফিউশন প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন করে।

✔ আমাদের সূর্যও একটি প্রধান অনুক্রম তারা।

✔ এরা লক্ষ-কোটি বছর টিকে থাকতে পারে।


2️⃣ দৈত্য ও মহাদৈত্য তারা (Giant & Supergiant Stars)
✔ যখন প্রধান অনুক্রম তারার জীবন শেষের দিকে চলে আসে তখন তারাগুলো ফুলে উঠে লোহিত দৈত্য (Red Giant) বা নীল দৈত্য (Blue Giant) হয়ে যায়।
✔ উদাহরণ: বিটেলগিউজ (Red Giant) এবং অ্যান্ট্যারেস (Supergiant)
✔ এই তারাগুলো জীবনের অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে এক মহাবিস্ফোরণের—সুপারনোভার—মাধ্যমে মহাকাশে বিচ্ছুরিত হয়ে যায়। এই বিস্ফোরণ এতটাই শক্তিশালী যে তারার উপাদানগুলো বিশাল গতিতে মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ে, সৃষ্টি করে নীহারিকা ও নতুন নক্ষত্রের উপাদান।
(এ নিয়ে (তারার শেষ পরিণতি)'মহাশূন্যের গহীনে' ষষ্ঠ পর্বে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে <click here>)

3️⃣ ক্ষুদ্র তারা (Dwarf Stars)

✔ যখন দৈত্য তারা বিস্ফোরিত হয়, তখন অনেক সময় তারা ছোট হয়ে যায় এবং শ্বেত বামন (White Dwarf), নিউট্রন তারা (Neutron Star) বা ব্ল্যাক হোল (Black Hole) তৈরি হয়।

✔ উদাহরণ: সিরিয়াস বি (Sirius B) – একটি শ্বেত বামন তারা।

---

📌 সংক্ষেপে
✅ তারার রঙ ও তাপমাত্রা:
নীল তারা সবচেয়ে গরম (৩০,০০০°C+)।
লাল তারা সবচেয়ে ঠান্ডা (৩,৫০০°C-এর কম)।
সূর্য একটি হলুদ তারা।
✅ তারার শ্রেণিবিন্যাস (O, B, A, F, G, K, M):
নীল O-শ্রেণির তারা সবচেয়ে উজ্জ্বল ও গরম।
লাল M-শ্রেণির তারা সবচেয়ে ঠান্ডা ও দীর্ঘস্থায়ী।
সূর্য G-শ্রেণির তারা।
✅ তারার জীবন ও আকার:
প্রধান অনুক্রম তারা – সাধারণ তারা (যেমন সূর্য)।
দৈত্য তারা – বৃদ্ধ তারা, যেগুলো একসময় বিস্ফোরিত হয় (যেমন বিটেলগিউজ)।
ক্ষুদ্র তারা – শ্বেত বামন, নিউট্রন তারা, ব্ল্যাক হোল ইত্যাদি।
---
📖 পরবর্তী পর্ব: "কিছু বিখ্যাত তারা ও তাদের বৈশিষ্ট্য"
তাতে আমরা সূর্য, সাইরিয়াস, বিটেলগিউজ, প্রক্সিমা সেন্টাউরি ইত্যাদি তারাগুলোর সম্পর্কে জানবো।


(ইচ্ছে হলে কমেন্টে জানাতে পারো)
এই পর্বটি কেমন লাগলো? তুমি কি কোনো বিশেষ তারা সম্পর্কে জানতে চাও? 







Post a Comment

1Comments

Thanks everyday

  1. অনেক সহজ ভাবে সাজানো!
    আমার মত যারা প্রাথমিক তাদের জন্য অনেক বুঝতে অনেক সহজ হবে এবং অনেক মজার হবে,আমার বিশ্বাস

    ReplyDelete
Post a Comment
To Top